চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

শিক্ষক সংকটে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিন সরকারি কলেজ

নিয়মিত ক্লাস থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সরকারি তিন কলেজের শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। জাতীয়করণ হওয়ার দীর্ঘদিন পরও জেলার তিনটি কলেজে লাগেনি উন্নত শিক্ষার ছোঁয়া। সরকার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করে ছাত্রছাত্রীদের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক জ্ঞানদানের চেষ্টা চালালেও জেলার তিন সরকারি কলেজে আইসিটিবিষয়ক কোনো শিক্ষক নেই।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ ও শিবগঞ্জের আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে তাদের পরীক্ষার ফলও আশানুরূপ হচ্ছে না। নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে ইন্টারমিডিয়েট, ডিগ্রি, ১৪টি বিষয়ে অনার্স ও ৪টি বিষয়ে মাস্টার্স কার্যক্রম চালু থাকলেও এখনো প্রতিটি বিভাগে অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি হয়নি। এমনকি যে ৪টি বিষয়ে মাস্টার্স চালু রয়েছে সেখানে দুটি বিভাগে অধ্যাপক থাকলেও ব্যবস্থাপনা বিভাগে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। মাস্টার্স চালু কলেজে প্রতিটি বিভাগে একজন অধ্যাপকসহ ১১ জন শিক্ষক থাকার কথা রয়েছে। কিন্তু নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপকের পদটি শূন্য রয়েছে। বর্তমানে সেখানে একজন সহযোগী অধ্যাপক ও একজন সহকারী অধ্যাপক ও দুজন প্রভাষক রয়েছেন। ব্যবস্থাপনা বিভাগে মাত্র একজন সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন। বাংলা বিভাগে একজন অধ্যাপক, দুজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক রয়েছেন। হিসাববিজ্ঞান বিভাগে একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপক (প্রমোশনে অধ্যাপক), একজন সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকের পদ খালি রয়েছে।

অন্যদিকে, অনার্সের অন্যান্য বিভাগের মধ্যে বিশেষ করে অর্থনীতি বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক, দুুজন সহকারী অধ্যাপক ছাড়া প্রভাষকের পদ খালি রয়েছে। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক রয়েছে, বাকি প্রভাষক পদ শূন্য রয়েছে। দর্শন বিভাগে মাত্র একজন সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন। পদার্থবিদ্যা বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক রয়েছেন। রসায়ন বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক, (প্রমশনে অধ্যাপক) একজন সহকারী অধ্যাপক ও দুজন প্রভাষক রয়েছেন। প্রাণিবিদ্যা বিভাগে একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক, দুজন প্রভাষক পদ খালি রয়েছে। গণিত বিভাগে দুজন সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে একজন অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষকের পদ শূন্য রয়েছে। ইতিহাস বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক, দুজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক রয়েছেন। ইংরেজি বিভাগে একজন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, দুজন সহকারী অধ্যাপক ও দুজন প্রভাষক রয়েছে। ইসলাম শিক্ষা ও আরবী বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক (প্রমশনে অধ্যাপক), সহকারী অধ্যাপক একজন ও একজন প্রভাষক রয়েছেন। কম্পিউটার বিভাগে (আইসিটি) কোনো শিক্ষক না থাকায় কলেজের গণিত ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক দিয়ে ক্লাস চালাতে হয়। কলেজের প্রায় ১৪ হাজার ছাত্রছাত্রী ইন্টারমিডিয়েট, ডিগ্রি, ১৪টি বিষয়ে অনার্স ও ৪টি মাস্টার্স বিষয়ে ক্লাস নিতে হয়। এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজটি ১৯৮৭ সালে জাতীয়করণের পর এ পর্যন্ত এখানে অধ্যক্ষসহ ৩১টি পদ থাকলেও বর্তমানে কলেজে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৩ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেসরকারি কলেজগুলোয় অনার্স চালু রয়েছে ৬-৭টি বিষয়ে, সেখানে সরকারি কলেজ হওয়া সত্ত্বেও শুধু ইতিহাস বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে এবং এ বিভাগে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন সহকারী অধ্যাপক। যাকে অনার্সের ৪টি বর্ষেরসহ ইন্টারমেডিয়েট বিষয়ে ক্লাস নিতে হয়। এ ছাড়া কলেজের কম্পিউটার (আইসিটি), গণিত বিভাগ, যুক্তিবিদ্যা ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বিভাগে কোনো শিক্ষক নেই। আর যে বিষয়ে শিক্ষক রয়েছেন যাদের ইন্টারমিডিয়েট, ডিগ্রি বিষয়ে ক্লাস করাতে হয়। অন্যদিকে শিবগঞ্জের আদিনা সরকারি ফজলুল হক কলেজে ইন্টারমিডিয়েট, ডিগ্রি ও ৬টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। অথচ এই কলেজে অধ্যক্ষসহ ৪৪ শিক্ষকের পদ থাকলেও বর্তমানে সেখানে রয়েছেন মাত্র ২২ শিক্ষক। ইসলামের ইতিহাস বিভাগে কোনো শিক্ষক নেই। ২২ শিক্ষক দিয়ে প্রায় আড়াই হাজার ছেলেমেয়ের ইন্টারমিডিয়েট, ডিগ্রি ও ৬টি বিষয়ে অনার্স ক্লাস নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম মুনজুর রেজা জানান, একটি কলেজে অনার্স, মাস্টার্সে যেভাবে এনাম কমিশন থেকে শিক্ষকের পদ থাকে সেটি আমাদের কলেজে এখনো পুরোপুরি হয়নি। আবার যেসব পদ সৃষ্টি রয়েছে সেসব পদেরও শিক্ষক সংকট রয়েছে। আমি কলেজের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি প্রতি মাসে লিখিতভাবে ডিজি অফিসে আপডেট করে পাঠাই ও অধ্যক্ষদের সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিবসহ সরকারের শিক্ষা বিভাগকে অবহিত করেছি। আশা করছি শিগগিরই শূন্যপদে শিক্ষক পূরণ করবে সরকার।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম জানান, আমার কলেজে শিক্ষক সংকটের কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এমনকি অধ্যক্ষদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় সরাসরি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি কিছু নতুন পদ সৃষ্টির জন্য আবেদন করা হয়েছে। এই কলেজে কম্পিউটার, যুক্তিবিদ্যা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে প্রভাষক খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। আশা করছি নতুন বিসিএস ব্যাচের মাধ্যমে যেসব পদে প্রভাষকের পদ খালি রয়েছে সেগুলো অচিরেই পূরণ হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist