জাহাঙ্গীর হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি
নিহত মামুনের পরিবারের খোঁজ রাখেনি কেউ
আজ ২১ আগস্ট। গ্রেনেড হামলায় নিহত মামুনের পরিবার বিচারের অপেক্ষায়। নিহত মামুনের মায়ের অভিযোগ, পরিবারের খোঁজ খবর রাখেনি কেউ। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের আয়োজিত জনসভায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুনতে গিয়ে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার পশ্চিম আলিপুর গ্রামের দিনমজুর মতলেব মৃধার একমাত্র ছেলে কবি নজরুল সরকারী কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র মামুন মৃধা নিহত হন। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে পরিবারটি এখন নিস্তেজ-নির্বাক।
২১ আগস্ট এলেই মামুনের মা মোর্শেদা বেগম ছেলে হারানোর শোকে অজোরে কেঁদে থাকেন। মামুনের মা মোর্শেদা বেগম বলেন, ‘আমার মামুনেরে যারা খুন করেছে তারা আমার মামুনের কি অন্যায় পাইয়া খুন করছে, তা আমি আজও জানতে পারি নাই। আজ ১৩ বছর অতিবাহিত হলেও আমাদের কেউ খোঁজ খবর রাখেনি।’ তিনি মামুন হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান। প্রতি বছরের এই দিন আসলেই শুধু সকলের নজর এই বাড়িটির দিকে। ‘আমার মামুন আজ কত দিন মা বলে ডাকেনি’ ইত্যাদি কথা বলে মামুনের মা অজ্ঞান হয়ে যায়।
নিহত মামুনের পিতা মতলেব মৃধা জানায়, ‘আমার ৪ মেয়ে, ১ ছেলে। ২০০৩ সালে দশমিনা উপজেলার বিবি রায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে ‘এ’ গ্রেড পায়। ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবো বলে ঢাকার কলেজে ভর্র্তি করি এবং আমার ছেলে খারাপ হতে না পারে! সেই জন্য আমি নিজে নয়া টোলা সমিলে শ্রমিক হিসাবে কাজ করে একটি বাসা নিয়ে দুই বাপ পুত্র থাকতাম। তারপরও জমের হাত থেকে আমার ছেলে মামুনকে রক্ষা করতে পারি নাই। কোন কাজ কর্ম করতে গেলে চোখের সামনে বাবা মামুনের ছবি ভেসে ওঠে। তখন আর আমি কোন কাজ করতে পারি না। আমি বেকার, এ দিক সে দিক ঘুরে বেড়াই। মামুনের মৃত্যু বার্ষিকীতে কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও দশমিনা উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন শওকত, কিছু নেতা আর কিছু সাংবাদিকরা বাড়ী আইসা খোঁজ খবর নেয় তবুও ভাল লাগছে বর্তমান সরকার গ্রেনেড হামলার মামলা দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেয়ায়।’ কোন বাবার আদরের সন্তান যেন অহেতুক শাস্তি না পায়, এ জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান, মামুনের শোকার্ত পিতা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দশমিনার কোন নেতারাই সাড়া বছর মামুনের খোঁজ খবর রাখে না। শুধু ২১ আগস্ট আসলে তাঁরা লোক দেখানোর জন্য মামুন মৃধার পরিবারের খোঁজ খবর নিতে আসেন। এই পরিবারটি তাদের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
"