শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

  ১৯ আগস্ট, ২০১৭

চিকিৎসক সংকট, ভোগান্তিতে রোগী

খুঁড়িয়ে চলছে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

প্রয়োজনীয় লোকবল, চিকিৎসক সংকট ও যন্ত্রপাতির অভাবসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মাত্র ৪ জন চিকিৎসক ও ১৬ জন নার্স দিয়ে কোনোমতে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে হাসপাতালে আসা রোগীদের। এ নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের অভিযোগেরও শেষ নেই। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ধার করে চলছে বহির্বিভাগ। শুধু কর্মকর্তাই নয় আয়া, ঝাড়–দার, মালি, নিরাপত্তাকর্মী, ওয়ার্ডবয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর রয়েছে চরম সংকট। যার কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে বাইরে অসংখ্য গরু ছাগল অবাধে বিচরণ করছে। এমন দৃশ্য হাসপাতালে আসা রোগীদের কাছে খুবই পরিচিত। দশ চিকিৎসকসহ পঞ্চান্ন পদের বিপরীতে ২৩ পদ শূন্য। এতো শূন্যতা নিয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে পৌনে ছয় লাখ জনসংখ্যার নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবার এ সরকারি প্রতিষ্ঠান। জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. জহিরুন নেছা রেনু ও তেলিহাটি ইউনিয়নের সহকারী সার্জন ডা. হুজ্জাতুল ইসলাম পলাশ, কনসালটেন্ট(সার্জারি) ডা. সুমন চন্দ্র রায়, মেডিকেল অফিসার ডা.তাজনিয়া মাহনাজকে দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। তবে ডা. সুমন চন্দ্র রায় সপ্তাহের শনিবার এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেন। বাকি ছয় দিন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেন বলে জানা গেছে। এদিকে ডা. হুজ্জাতুল ইসলাম পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বে থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসক এনে জরুরি বিভাগ কোনো রকমে চালানো হচ্ছে। দুই জন পুরুষ ও দুইজন মহিলা ডাক্তার দিয়েই চলছে অপ্রতুল চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। এমন চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবুও মিলছে না সমস্যার সমাধান।

উপজেলা স্বাস্থকমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালের যাত্রা শুরু করে সরকার। সে সময় উপজেলায় লোকসংখ্যা ছিল দেড় থেকে দুই লাখ। এ দিকে ২০০০ সালের পর থেকে উপজেলার আশপাশে বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্পকারখানা স্থাপিত হওয়াই ভাসমান লোকসংখ্যার পরিমাণ বেড়ে যায় কয়েকশগুণ। দিন দিনই জনসংখ্যার চাপ বাড়তেই থাকে। এতো জনসংখ্যার চাপের কথা ভেবে ২০১২ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থকমপ্লেক্সের ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার পর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও

৩১ শয্যার লোকবল নিয়েই চলছে সেবা কার্যক্রম। এখনো জুনিয়র কনসালট্যান্ট ছয়টি, মেডিকেল অফিসার পাঁচটি, সিনিয়র স্টাফ নার্স পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রতিদিন এই হাসপাতালে অন্তত ৫০০ রোগী আসে। শিল্প এলাকা হওয়ায় রোগীর সংখ্যা মাঝে মাঝে ৬০০ ছাড়িয়ে যায়। যার ফলে রোগীদের সঠিক চিকিৎসা দিতে কষ্ট হয়ে যায়।

গত কয়েক দিন আগে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়া শিশু রায়হান (৪) কে তার স্বজনরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসক না থাকায় শিশুটি চিকিৎসার অভাবে খুব কান্নাকাটি করছিল। এ সময় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মীমও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে এসে জরুরি বিভাগের একটি সিটে শুয়ে কাতরাচ্ছিল। এ সময় দুই শিশুর কান্নায় হাসপাতাল এলাকা ভারি হয়ে ওঠে। তখনও কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। ঠিক আধা ঘন্টা পরে এক ওয়ার্ডবয়সহ এক নারী চিকিৎসক জরুরি বিভাগে আসে। পরে শিশু দুটির ড্রেসিং করে চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থাপত্র দেয়। সরকারি হাসপাতালে এমন চিকিৎসক বিহীন বেহাল অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আহত শিশু রায়হানের বাবা মুজিবুর রহমান।

গর্ভবতী গৃহবধূ আছিয়া বেগম জানান, এ ডাক্তারখানায় পোয়াতিদের (প্রসূতি) ডাক্তার আছে, কিন্তু এখানে অপারেশন (সিজার) করা

হয় না। ডাক্তাররা বলে বাইরের কোনো হাসপাতালে সিজার করানোর জন্য। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী বলেন, এখানে রোগীর প্রচ- ভিড় হয়। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সারা দিন চলে যায়। এত বড় একটি উপজেলার জন্য মাত্র কয়েকজন ডাক্তার দিয়ে সেবা দেওয়া কী করে সম্ভব! শ্রীপুরের শাহীন আলম তাঁর শিশুর জ্বর হয়েছিল। এখানে এসে তিনি জানতে পারেন, হাসপাতালে শিশুরোগ বিভাগে কেউ নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হুজ্জাতুল ইসলাম পলাশ জানান, সপ্তাহে চল্লিশ ঘন্টা সেবা প্রদানের নিয়ম থাকলেও চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে কোনো সময় চিকিৎসকরা ষাট ঘন্টা কাজ করছে। এটা একজন চিকিসকের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালে এখনো ৫০ শয্যার সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি। চিকিৎসকের চরম সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। শিগগিরই চিকিৎসক সংকট নিরসন না হলে এ বিশাল জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়বে।

গাজীপুর জেলার সিভিল সার্জন সৈয়দ মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, শিগগিরই সারা দেশে ডাক্তার নিয়োগের প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে সরকার। নিয়োগ হলেই শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সংকট থাকবে না। এ ছাড়াও হাসপাতালটির অন্যান্য সমস্যার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist