প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৮ আগস্ট, ২০১৭

বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় মানুষ

দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করেছে। অপরদিকে দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অবনতিশীল। সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। এ ছাড়া মধ্যাঞ্চলের চতুর্দিকের ৫টি নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার হতে ১২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে মানুষ। প্রতিনিধির পাঠানো খবর-

সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জের ৫টি উপজেলার নি¤œাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত পানি বিপদসীমার ১৫২ সে.মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান, সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী হাসান ইমাম। এতে বর্তমানে পানির স্থিতিশীলতার কথাও জানান তিনি। যমুনার পানি বৃদ্ধিতে চৌহালী বাধ ও কাজিপুরে ব্যাপকভাবে ধস দেখা দিয়েছে। এছাড়াও সিরাজগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ৭ হাজার ৮৩০ হেক্টর আবাদী জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে বলে জানায়, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আরশেদ আলী। ক্ষতি গ্রস্থ কৃষকদের পুনর্বাসনের পদক্ষেপের কথাও জানান তিনি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ১৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এর মধ্যে গতকাল রাত পর্যন্ত ১০৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্থ লোকেরা আশ্রয় নিয়েছে।

মানিকগঞ্জ : পদ্মা-যমুনাসহ জেলার অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মানিকগঞ্জে বন্যার পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। জেলার শিবালয়, হরিরামপুর, ঘিওর, সাটুরিয়া, দৌলতপুরসহ ৫টি উপজেলার অন্তত ৩০টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে জেলার ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব অঞ্চলের বেশির ভাগ রাস্থা ঘাট ও ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে আমন ধানসহ বিভিন্ন প্রকার ফসলি জমি। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংঙ্কট। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুত্র মতে যমুনা নদীর আরিচা পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত। বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় কোন কোন নদীর পানি সামান্য কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তি রয়েছে। এদিকে করতোয়া নদীর পানি গতকাল গোবিন্দগঞ্জের তরফকামাল, তরফমনু, চষকপাড়া, চক গোবিন্দ ও কাইয়াগঞ্জ এলাকায় গোবিন্দগঞ্জ-ফুলবাড়ি-দিনাজপুর উপমহাসড়কের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গোবিন্দগঞ্জের সাথে দিনাজপুরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল জানান, এবারের বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য ৬শ’ ২৬ মে.টন চাল ও ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা বন্যা দুর্গত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। মজুদ রয়েছে ৬৪ মে. টন চাল ও ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া আরও ৫শ’ মে. টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এদিকে গাইবান্ধার সাতটি উপজেলাই বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় উপজেলার ২৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অন্যান্য বিদ্যালয়ের লেখাপড়া চললেও বন্যা কবলিত বিদ্যালয়গুলোর জন্য আগামী ১৯ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে স্থগিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে।

রাজবাড়ী : রাজবাড়ী জেলায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ফসল ও ঘরবাড়ী তলিয়ে গেছে। গতকাল গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যাচ্ছে। দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মারাত্বক ক্ষয়ক্ষতি সহ শতাধিক ঘর-বাড়ী পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। অভাবি মানুষ ঘর-বাড়ী হারিয়ে পাকা রাস্তা ও রেললাইনের পাশে আশ্রয় নিয়েছে। গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, উজানচর, ছোট ভাকলা রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট, মিজানপুর, চন্দনী, দারসি, খানগঞ্জ, কালুখালী উপজেলায় রতনদিয়া, সাওরাইল পাংশা উপজেলায়- হাবাসপুর ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। হাজার একর জমির ফসল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম মন্ডল জানান, জেলার মধ্যে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নুরমহল আশরাফি প্রমুখ বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা বাজার এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ৪ শত পরিবারকে ত্রান ও নগদ টাকা বিতরণ করেন।

ফরিদপুর : জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার নদীভাঙন কবলিত ও বর্নার্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া। গতকাল সকালে ভাঙ্গন কবলিত বালিয়া ডাঙ্গী ও ফাজেল খার ডাঙ্গী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থদের খোঁজ খবর নেন তিনি। এ সময় তিনি নদী ভাঙনে ভিটে হারা বাইশ পরিবারের মাঝে চাল ও শুকনা খাবার বিতরন করেন। পরে তিনি ট্রলার যোগে নদী ভাঙ্গন ও বন্যা কবলিত বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এরাদুল হক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সগীর হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এজিএম বাদল আমিন, জেলা নির্বাহি ম্যাজিট্রেট পারভেজ মল্লিক, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপ্তিময়ী জামান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তানজিনা আক্তার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মানোষ বোস, ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ খান প্রমুখ।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় ‘দৈনিক প্রগতির আলো’ পত্রিকার উদ্যোগে গতকাল ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফ হোসেনের নির্দেশনায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত থেকে দুর্গতদের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন দৈনিক প্রগতির আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক আনোয়ার সাদাৎ ইমরান।

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) : মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে গত ৪ ও ৫ জুন কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলা অংশে ৮টি ভাঙনের সৃষ্টি হয়। সেই ভাঙন কবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নামকাওয়াস্তে দু’ফুট উচু অস্থায়ী রিং বাঁধ দিয়ে রেখেছে। ইতোমধ্যে ২ বার রিং বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌ. মো. গোলাম রাব্বি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড এর সাথে কথা হয়েছে। বৃষ্টিপাত থামলেই তারা কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।

নন্দীগ্রাম (বগুড়া): বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার দুটি ইউনিয়নের নিচু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নাগর নদীর পানি উপচে এবং পারশুনে বাঁধ ধসের কারণে উপজেলার ২০টি গ্রামের মাঠ বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি কিছু কিছু ঘরবাড়িসহ পোষ্ট অফিসে পানি উঠতে শুরু করেছে। জানা গেছে, উপজেলার থালতা মাজগ্রাম ইউনিয়নের সারাদীঘর, নিমাইদিঘী, বাঘাদহ, পারঘাটা, গুলিয়া, কৃষ্ণপুর, ঘুনপাড়া, জামালপুর, গোপালপুর, বনগ্রাম, পারশুন ও ভাটরা ইউনিয়নের নাগরকান্দি, রুস্তমপুর, দমদমা, ডেওবাড়ি, বৃষ্ণপুর, শশিনগর, চাতরাগাড়ি, কালিয়াগাড়ি, মূলকুড়ি মাঠ পানিতে থৈ-থৈ করছে।

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) : জেলার সরিষাবাড়ীতে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। উপজেলার আওনা ইউনিয়নের স্থল এলাকায় তারাকান্দি-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়ক গত বুধবার গভীর রাতে ভেঙে গেছে। এতে রাজধানীসহ উত্তরাঞ্চলে যাতায়াতের সব ধরনের যানবাহন ও যমুনা সার কারখানার সার পরিবহন এ সড়কে বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া আওনা ও পিংনা ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে যমুনা নদীর তীর ঘেষে স্থল বেড়িবাঁধ ও কাওয়ামারা বাঁধের কয়েকটি স্থানে লিকেজ সৃষ্টি হওয়ায় সেনাবাহিনী সার্বক্ষনিক কাজ করছে। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় ডোয়াইল ইউনিয়নের বালিয়া ও ডি-কেন্দুয়া বেরিবাঁধ, আওনা ইউনিয়নের ভবানীপুর, কামরাবাদ ইউনিয়নের শুয়াকৈরসহ কয়েকটি সড়ক ও বেরিবাঁধ ভেঙে গেছে। পৌর শহরের আরামনগর ও শিমলা বাজারসহ হাসপাতাল, থানা, ফায়ার সার্ভিস, পোস্ট অফিস, খাদ্য গুদাম, পশু হাসপাতাল, কয়েকটি সরকারি দপ্তর ও তিনটি জুটমিল পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist