প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৬ আগস্ট, ২০১৭

প্লাবিত হচ্ছে মধ্যাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা

শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট

বৃষ্টি কমে এলেও এখনো তেমন উন্নতি হয়নি উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির। ঠাকুরগাও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও, বাকি জেলাগুলোতে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। প্লাবিত হচ্ছে মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার নতুন নতুন এলাকা। ঢলে দেশের প্রায় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দেশের ২০টি জেলা বন্যার কবলে পড়েছে। আমাদের প্রতিনিধির পাঠানো খবর-

সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি আবার ও বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জের ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যা বতর্মানে বিপদ সীমার ১২৮ সে. মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানায়, সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী হাসান ইমাম। তিনি আরও জানান, বিগত একশত বছরেও নদীগুলোর পানি এমনিভাবে বৃদ্ধি পায়নি। যমুনার পানি বৃদ্ধিতে চৌহালী বাঁধ ও কাজিপুরে ব্যাপকভাবে ধস দেখা দিয়েছে। জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ইতিমধ্যেই ৩৭৩ মেঃটন চাউল ও ৯ লক্ষ টাকা বিতরন করা হয়েছে বলে জেলা ত্রান ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য একাধিক মেডিক্যাল টিমও কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. শেখ মো. মঞ্জুর আলম।

নওগাঁ : বন্যার পানিতে বাড়ি ঘর ডুবে যাওয়ায় গত ৪দিন থেকে পলেথিন টাঙিয়ে সপরিবারে রাস্তায় বসবাস করছেন। আর এখানে সপরিবারে কষ্ট করে থাকা খাওয়া। যেখানে বসবাস সেখাইনে রান্না ও ছাগল বাঁধা। এই পরিবেশ নওগাঁর মান্দা উপজেলার শামুকখোল গ্রামের বয়জ্যেষ্ঠ আইফা বেগমে। নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা এবং গত তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ১৪ টি স্থান ভেঙে গেছে। এরমধ্যে মান্দায় ৬টি, রানীনগর ৫টি, আত্রাইয়ে ২টি ও পতœীতলায় ১টি বাঁধ ভেঙে গেছে। বন্যার পানিতে জেলার রাণীনগর, আত্রাই, মান্দা, পতœীতলা, বদলগাছী ও ধামইরহাট উপজেলায় তলিয়ে গেছে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। এতে প্রায় দুই লাখ লোক পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।

বগুড়া : বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারন করছে। পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় হুমকিতে পড়েছে দুটি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ। এদিকে ৩ উপজেলার ৮২ টি বিদ্যালয়ে পানি উঠায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান বন্ধ রয়েছে। সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার অন্ততঃ ১০ টি পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ দিয়ে পানি চুয়ে ভিতরের অংশে প্রবেশ করছে। এতে এসব এলাকার লোকজন ব্যাপক আতঙ্কের মধ্যে পড়েছে। অনেকে বাড়ি ঘর সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে যমুনার পানি বিপদসীমার ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপর দিকে যমুনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাঙালী নদীর পানিও বাড়ছে। দুই নদীর নিম্মাঞ্চলের এলাকা গুলো এখন প্লাবিত। বন্যার্ত ও বাঁধের ওপর সহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে। বগুড়া পানি উন্নয়নের বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশরী রুহুল আমিন যমুনার পানিবৃদ্ধির কারনে বাঁধ ঝুকির মুখে পড়ার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, কিছু সমস্যা থাকলেও পারিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রয়েছে।

জেলা ত্রান কর্মকর্তা শাহারুল হোসেন মো: আবু হেনা জানিয়েছেন জেলার বন্যাকবলিত ৩ উপজেলা সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে রয়েছে।

গাইবান্ধা: বন্যার পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১শ’ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৭ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, জেলার প্রায় ৭৮ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মধ্যে ফুলছড়ির সিংড়িয়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ১০টি পয়েন্টে লিকেজ দেখা দেয়। বালির বস্তা এবং বাঁশের পাইলিং করে ওই স্থানগুলো রক্ষা করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদারের শ্রমিক ছাড়াও রংপুর-৬৬ ডিভিশনের সেনা বাহিনীর ৮৫ জনের একটি টিম ওইসব স্থানগুলোতে কাজ করছে। এদিকে গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাধটি হুমকি মুখে রয়েছে। বাধটিতে লিকেজ দেখা দেয়ায় বালির বস্তা দিয়ে ওই স্থান রক্ষা করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

জামালপুর : দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ আকার ধারণ করেছে। এর পরও বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত যমুনায় বন্যার পানি বিপদসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলার ৪৮টি ইউনিয়নের ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং পাঠদান বন্ধ হয়েছে ৩০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।

ইসলামপুর (জামালপুর): যমুনার পানি বিপদসীমার ১৪০সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হুহু করে পানি প্রবেশ করছে বিস্তীর্ণ জনপদে। তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট,ঘরবাড়ি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ফসলি জমির মাঠ ও গ্রামের পর গ্রাম। চরম দূর্ভোগে পড়েছে বন্যা কবলিত মানুষ। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) আব্দুল মান্নান জানান,জেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল সকালে বিপদসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাথর্শী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইফতেখার বাবুল জানান, নয়টি গ্রামের ২০হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।পার্থশী ইউনিয়নের নুরুল হুদা মাদরাসায় ৫শতাধিক পরিবার এবং জারুল তলা ব্রীজে ৩শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

রাণীনগর (নওগাঁ) : পাহাড়ি ঢলে নওগাঁর আত্রাই (ছোট যমুনা) নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাণীনগর উপজেলার বেরীবাঁধের ২ স্থানে ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করায় কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১০হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। অপরদিকে ২টি স্কুলসহ সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : ব্রহ্মপূত্র, ধরলা, দুধকুমর ও তিস্তা নদীর বানের পানি উপজেলাকে আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে ফেলেছে। এক রাতের ব্যবধানে ৪টি নদ-নদীর বানের পানিতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান,তার ইউনিয়ন ধরলা,দুধকুমর ও ব্রহ্মপূত্র নদ বেষ্টিত। ধরলা নদীর পানি স্বরণ কালের ভয়াবহ আকার ধারন করায় তার ইউনিয়নের ২২ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চরম আকার ধারন করছে। ব্রহ্মপূত্র বিচ্ছিন্ন সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ৫২ টি চর তলিয়ে যাওয়ায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন বিএসসি জানান, চর গুজিমারী, চর দাগারকুটি,বাবুরচর, গাবুরজান,র নয়াডারা, শ্যামপুর, তাঁতিপাড়া, হাতিয়া ভবেশ, অনন্তপুর সহ নদ অববাহিকার বেশিরভাগ গ্রাম তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist