প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ আগস্ট, ২০১৭

ঢল ও বর্ষণে বন্যার অবনতি

বেড়েছে ফসলের ক্ষতি খাদ্য সংকট, পানিবন্দি

টানা বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ভেসে গেছে মাছের ঘের, ফসলের জমি, চাষের আমনসহ মৌসুমি ফসল। পানিবন্দির সংখ্যা বেড়েছে। বন্যা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় কোথাও কোথাও খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। তবে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানা গেছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নওগাঁ : উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নওগাঁর মান্দায় দুটি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ আত্রাই নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে প্রায় ১০০টি পরিবার পানি বন্দি হয়েছে। প্রায় দুইশ বিঘা ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার নুরুল্লাবাদ এলাকায় বাঁধ ভাঙ্গার ঘটনাটি ঘটেছে। এ ছাড়া জেলার ধামইরহাট উপজেলায় বিপদ সীমার ১৪০ সেন্টিমিটার ও মান্দা একশ’ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুজ্জামান জানান, বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় দুইশ’ বিঘা ফসলি জমি তলিয়ে গেছে এবং প্রায় ৩০টি পুকুরের মাছ ভেঁসে গেছে। ঘটনাটি জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষদের জন্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ফেনী : টানা বর্ষণে আবারো প্লাবিত হতে যাচ্ছে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া এলাকার জনপদ। পূর্বে এ তিন নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ফেনীর উত্তরাঞ্চলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানিবন্দী হয়ে পড়ে এ অঞ্চলের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। ফেনী পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসের টানা বর্ষণ এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বেড়িবাঁধের অন্তত ৯ স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়।

ফেনী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কহিনুর আলম বন্যার ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ। এ ব্যাপারে জানতে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কল কেটে দেন।

বগুড়া : বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ৫৮টি চর গ্রমের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। গত জুলাই মাসের শেষে বন্যা থেকে মুক্তি পেয়ে ঘরে ফিরতে না ফিরতেই আবারো বন্যায় শংকিত হয়ে পড়েছে যমুনা পাড়ের মানুষ।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, যমুনা নদী তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ৫০টির বেশি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। পানি আরো বাড়তে পারে। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, বন্যা মোকাবেলার জন্য প্রস্ততিও রয়েছে ব্যাপক।

বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান, যমুনা নদীর সাথে বাঙালি নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদী এালাকার কিছু এলাকায় পানি উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তরা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।

রংপুর : বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুরে তিস্তা ও ঘাঘটসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি অস্বভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, কাউনিয়া ও বদরগঞ্জ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা, ডুবে গেছে রোপনকৃত আমনখেতসহ বিভিন্ন ফসল। অপরদিকে তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধের পীরগাছা পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের ৩ কিলোমিটার অংশ হুমকির মুখে পড়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় কোনো ত্রাণ সামগ্রী না পৌঁছানোয় পানিবন্দি লোকজন চরম বিপাকে পড়েছেন। বর্তমানে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলার অর্ধশত গ্রামের গ্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কোলকোন্দ ইউনিয়নের তিস্তার বাধ ভেঙে যাওয়ায় চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে যেতে বসেছে। পীরগাছা উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের গ্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের তিস্তার বাধ ভেঙে যাওয়ায় শিবদেবচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যেতে বসেছে।

আমতলী (বরগুনা) : বরগুনার আমতলী উপজেলায় গত তিনদিনের বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার নি¤œঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকার রোপা আমনের ক্ষেত ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পনিবন্দি হয়ে জরুরি কাজ ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হতে পারছে না। উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম বদরুল আলম কিছু কিছু এলাকার ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে স্বীকার করে জানান, এই বৃষ্টির ফলে ক্ষেতে পোকামাকড় ধরতে পারবে না। তবে বৃষ্টি একটানা কয়েকদিন থাকলে আমন ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হবে। টানা বৃষ্টি ও জোয়োরের পানিতে উপকূলীয় নদীতে দেড় মিটার পানি বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে।

রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) : ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা দক্ষিন পাড়া, হাড়িয়া, ভবানীপাড়া সহ উপজেলা জুড়ে চলছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আহাজারি। একইভাবে পৌরশহরের পাইলট স্কুল পাড়া, ভাটাপুরা, হাড়িয়া, চড়োল পাড়া, কাশিপুর ইউপির বিভিন্ন গ্রামসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মানুষের বাড়ী ঘর বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়াও সদ্য লাগানো ধান সর্বনিন্ম ১০ ফিট পানির নিচে অবস্থান করছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) : মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর পাড়ে ৪র্থ দফা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। নতুন করে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ী, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা আর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে হাওর পাড়ের দূর্গত এলাকায় মানুষেরা। দীর্ঘ ৩-৪ মাস থেকে নেই কোন আয়-রোজগার। এছাড়াও গত ২ মাস থেকে ওএমএস ও ১ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে সরকারী ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌ. মো. গোলাম রাব্বী জানান, মনু নদীর একটি এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছিলো পরে এলাকাবাসী সেচ্ছাশ্রমে স্থানটি মেরামত করেছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী জানান, মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ৩৯টি পয়েন্টে পাথরের ব্লক স্থাপনের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist