প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
ফের বন্যা
নতুন করে পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ
ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে দেশের কয়েকটি অঞ্চল। এরই মধ্যে নতুন করে পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। পানি বাড়ছে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, তিস্তাসহ বেশির ভাগ নদ-নদীতে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে শতাধিক গ্রাম। এ ছাড়াও পানি বিপদ সীমার ওপরে থাকায় নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে গেছে। দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
যশোর : জেলার কেশবপুরে কয়েক দিনের ভারী বষর্ণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সড়কগুলো পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। কয়েক দিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩টি ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারণের কাজ করে চললেও তেমন কোন উন্নতি হয়নি। গত ২০ জুলাই থেকে কয়েক দফা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় কেশবপুরে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র ও সড়কের পাশে উঁচু জায়গায় প্রায় ৭ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
নেত্রকোনা : অবিরাম বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার সকালে চন্ডীগর, কুল্লাগড়া, গাঁওকান্দিয়া, বাকলজোড়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের ফসলি জমি প্লাবিত করেছে। এতে ৯টি বিদ্যালয়ের শনিবারের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এলাকার ফসলি জমি ও পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে খোয়াই নদীর পানি বিপদ সীমার ২১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে শহরের লোকজনের মধ্যে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম জানান, খোয়াই নদীর পানি বিপদ সীমার ২১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের খোয়াই অংশে পানি কমছে। বৃষ্টি না হলে বিকেলের দিকে পানি কমতে পারে।
ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) : পাহাড়ি ঢলে ও টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ধর্মপাশা উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার জনগোষ্ঠী। সেই সঙ্গে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার অর্ধশতাধিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যার জন্য স্থগিত করা হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় সাময়িক পরীক্ষা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মে. মামুন খন্দকার বলেন, আমি এলাকার চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে বন্যায় কবলিত এলাকার মানুষদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী অন্তত ২০টি গ্রামের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ওই সব গ্রামে গতকালও পানি বাড়ে। এতে মানুষের মাঝে চরম দুর্ভোগ দেখা দেয়। অনেকে নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি (কসবা-আখাউড়া) এর নির্দেশনায় ওই সব এলাকায় জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হয়েছে। সরকারিভাবে চাল বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি আক্রান্ত এলাকায় শুকনো খাবার হিসেবে চিড়া, মুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। জানা গেছে, আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ, মোগড়া ও মনিয়ন্দ এলাকার ভারত সীমান্তবর্তী অন্তত ২০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের মধ্যে রয়েছে, কালিকাপুর, বীরচন্দ্রপুর, আব্দুল্লাহপুর, বঙ্গেরচর, রাজেন্দ্রপুর, খারকুট, আইড়ল, লক্ষীপুর, বড় লৌহঘর, গাঙ্গাইল, ষোল লৌহঘর, টনকী, বান্ডুশাহ ইত্যাদি।
শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) : শায়েস্তাগঞ্জ শহরে খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সকলকে সতর্ক থাকার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এমএল শওকত জানান, গত বৃহস্পতিবার ভারতের ত্রিপুরায় ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর হবিগঞ্জ জেলায় ৩৯.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ভারত খোয়াই ব্যারেজ খুলে দেয়ায় এদিকে গত শুক্রবার বিকেল থেকে শায়েস্তাগঞ্জ শহর এলাকা দিয়ে খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
উখিয়া (কক্সবাজার) : উখিয়ায় শুক্রবার থেকে একটানা ভারি বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলে প্রায় ৩০ গ্রাম ব্যাপক প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল বিকালে রিপোর্ট লেখাকালীন পর্যন্ত অতি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। টানা ২দিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে অর্ধ শতাধিক ঘরের মাটির দেওয়াল ধ্বসে পড়ে। লন্ডবন্ড হয়ে যায় গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের নলবনিয়া, বটতলী, আঞ্জুমান পাড়া, থাইংখালী রহমতের বিল ও বালুখালীতে অন্তত ৬০ টি চিংড়ি ঘের ও মৎস্য পুকুর পানির সাথে একাকার হয়ে কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নাফ নদীতে ভেসে গেছে।
"