জাহাঙ্গীর হোসেন, পটুয়াখালী
অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হচ্ছে কুয়াকাটা সৈকত
কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমের অস¦াভাবিক জোয়ারে এ ভাঙন আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে ফার্ম এন্ড ফার্মস ও কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যানের শত শত গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে সমুদ্র তীরের বহু খুদে দোকানি তাদের দোকানপাট কয়েক দফা স্থানান্তর করেছেন ইতোমধ্যে। মহাসড়কের পাশে ছাড়া এখন আর সরানোর জায়গা নেই। ফলে খুদে দোকানিরা এখন চরম বিপাকে পড়েছেন।
জানা গেছে, গত কয়েক বছরের সমুদ্রের অব্যাহত ভাঙনে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাপটায় ও অব্যাহত বালু ক্ষয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩৩ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত ল-ভ- হয়ে গেছে। গত ১০ বছরের ব্যবধানে লতাচাপলী মৌজার কয়েক হাজার একর জমি সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে সৈকতের সবুজ বেষ্টনী, কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যানসহ মসজিদ-মন্দির।
ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে বন বিভাগের কয়েক হাজার হেক্টর বনভূমি। ১৯৬০ সালে সৈকতের কোল ঘেঁষে প্রায় ২০০ একর জমিতে ছিল প্রকৃতিপ্রেমী ফয়েজ মিয়ার নারিকেল বাগান। ফয়েজ মিয়ার এ নারিকেল বাগানটির প্রতি ছিল ভ্রমণপিপাসুদের এক অন্য রকম আকর্ষণ। কুয়াকাটা ফার্মস এন্ড ফার্মস নামে বাগানটির নামকরণ থাকলেও সারি সারি নারিকেল গাছ থাকায় নারিকেল বাগান হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত ছিল বাগানটি। গাড়ি পার্কিং, পিকনিক স্পট, পর্যটকদের বিনোদন কেন্দ্র ছিল এ বাগানটি। কিন্তু কালের বিবর্তনে বাগানটি আজ শুধুই স্মৃতি। গত বছর বর্ষার শেষ মৌসুমে বেশ কিছু নারিকেল গাছ মূলের মাটি হারিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। চলতি মৌসুমে তা আর টিকে থাকতে পারেনি। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জিরো পয়েন্টের পশ্চিম পার্শ্বে ছিল একটি শালবাগান। কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করত বাগান দুটি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঢেউয়ের ঝাপটায় ও বালু ক্ষয়ে ধীরে ধীরে সাগরগর্ভে বিলীন হতে থাকে বাগানের এক একটি অংশ। গত বছরের বর্ষা মৌসুমে ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাগানের একটি ক্ষুদ্র অংশ অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু এ বছরের শুরুতেই সমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঢেউয়ের থাবায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে ফয়েজ মিয়ার সেই শখের নারিকেল বাগান।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, গত ২০ বছর অব্যাহত বালু ক্ষয় হচ্ছে সমুদ্র সৈকতের। বালু ক্ষয় রোধের চেষ্টা করেনি কোনো সরকার। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জোয়ারের পানি অস্বভাবিক বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রচন্ড ঢেউয়ের আঘাতে বালু ক্ষয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা। এতে সৈকতের বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য গাছের মূল। এ ছাড়াও বনাঞ্চলের পাশে এখনো অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়ে আছে। ফলে জোয়ারের সময় কুয়াকাটা আসা দর্শনার্থীদের সমুদ্রস্নানে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে।
কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব জানান, কুয়াকাটা বিচ প্রটেকশনের কাজ দ্রুত শুরু না করলে অবশিষ্ট সৈকত চরম দুরবস্থায় পড়বে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, কুয়াকাটা বিচ রক্ষা প্রকল্পের কাজের পরিকল্পনা চলছে। তবে কবে নাগাদ এ কাজ শুরু হবে তা জানাতে পারেননি তিনি।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. মাছুমুর রহমান জানান, সৈকতের বালু ক্ষয় রোধে সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে যা অচিরেই কাজ শুরু করা হবে।
"