রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
যেখানে নেই কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান!
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল মাদারবুনিয়া ও চরকাশেমে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। স্কুল না থাকায় প্রায় ৩ হাজার ছেলে-মেয়ে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ নিয়ে তাদের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। এমনকি তাদের বাবা-মায়েরাও মনে করছেন স্কুল না থাকলেও কিছু যায় আসে না। এর ফলে তাদের সন্তানরা পরিবারের সঙ্গে কৃষি ও অন্যান্য গৃহস্থালী কাজে তো সময় দিতে পারছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের চরমাদারবুনিয়া ও চরকাশেমে ৬ হাজারের বেশি জনসংখ্যা হলেও মাদারবুনিয়া চরে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। সচেতন কেউ কেউ কয়েকবার চেষ্টা করলেও এসব অঞ্চলে কোনো সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারেননি।
মাদারবুনিয়ার স্থানীয় কয়েকজন জানান, মাদারবুনিয়ার কাছাকাছি রসুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মুজিববাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে তা-ও প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার দূরে। যাতায়াত ব্যবস্থাও খারাপ। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তাদের পক্ষে শিশুদের লেখাপড়া করানো সম্ভব হয় না।
চরকাশেমের একাধিক বাসিন্দা জানান, চরকাশেম হলো দুর্গম একটি দ্বীপাঞ্চল। এখানকার অনেক ছেলে-মেয়ে স্কুলের চৌকাঠও পার হয়নি। চরকাশেম থেকে নদীপথে ৩ কিলোমিটার দূরে সামুদফাৎ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর গঙ্গিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫ কিলোমিটার দূরে। যেখানেই পড়ালেখা শিখতে যেতে হোক না কেন তাদের নদীপথই শেষ ভরসা।
চরকাশেমের শিক্ষাবঞ্চিত সনিয়া আক্তার সালমা (১০) বলেন, ‘ল্যাহা পড়া করি না। মার লগে কাম কাইজ করি। ল্যাহা পড়া কইরা কি করমু।’ সালমার হয়তো এ বয়সে চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করার কথা। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে কানামাছি বা গোল্লাছুট খেলবে এটাই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সে এ বয়সে এখন মায়ের সঙ্গে সংসারের কাজের জোগান দিচ্ছে।
চরকাশেমের বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, ‘চরকাশেমের ছেলে-মেয়েরা স্কুল দেখতে কেমন হয় তাই জানা নেই। এখানকার ছেলে মেয়েদের কথা চিন্তা করে অন্তত একটি প্রাইমারি স্কুল করা উচিত।
এ ব্যাপারে রাঙাবালী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম সগির বলেন, ‘মাদারবুনিয়া ও চরকাশেমের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা বঞ্চিত এ কথাটি সঠিক। আর এ জন্য আমরা খুব দ্রুত ওই দুটি এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য প্রস্তাব পাঠাব।’
"