রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরে পোলট্রি শিল্প
৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান
রংপুর বিভাগের অমিষের চাহিদা পূরণ করেও দেশের বাইরে রপ্তানি করার সক্ষমতা রাখে পোলট্রি শিল্প। গত ১০ বছরে প্রসার হয়েছে ১০ গুণের বেশি। এ শিল্পে বিভাগে প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় প্রাণিস¤পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, খামারী শিল্পের বড় হ্যাচারি ফিড কোম্পনীর মালিকরাই নিজস্ব ফার্মের ডিম, বয়লার উৎপাদন করে বাজারজাত করার ফলে চোট চোট খামারীরা প্রতিযোগীতায় ঠিকতে পারছে না। এ অঞ্চলের বর্তমান বাজারে যে পরিমাণ ডিম, মুরগি, বাচ্চা ও ফিডের প্রয়োজন তার প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জোগান হচ্ছে এখান থেকে। এ বিভাগে মুরগির খামার রয়েছে ৬ হাজার ১৩৯টি। এর মধ্যে লেয়ার ২ হাজার ৩৭৯টি এবং ব্রয়লার ৩ হাজার ৭৬০টি। একটি মাঝারি মানের মুরগির খামার করতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। রক্ষণাবেক্ষণ করতে কমপক্ষে ১৫ জন জনবল কাজ করে। সে হিসাবে এ শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে ৪০০ কোটি টাকার ওপর। কর্মসংস্থান হয়েছে এক লাখ মানুষের।
এ বিভাগে মোট মুরগির সংখ্যা ২ কোটি ৮৮ লাখ ১ হাজার ৭৭৯টি এবং হাঁসের সংখ্যা ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪২টি। আমিষের চাহিদা পূরণ ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে একজন মানুষের বছরে ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। বিভাগে ডিমের চাহিদা রয়েছে ১৬২ কোটি পিস। গত অর্থবছরে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪৩ কোটি পিস। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ১৪০ কোটি পিস। ১০ বছর আগে এর উৎপাদন ছিল ১০ ভাগের এক ভাগ। এসব বিষয় জানিয়েছেন রংপুর প্রাণিস¤পদ কর্মকর্তা।
অপরদিকে এ বিভাগের ১ কোটি ৫৫ লাখ মানুষের মাংসের চাহিদা রয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার টন। প্রতিদিন একজন মানুষের মাংসের চাহিদা ১২০ গ্রাম সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ১১০ গ্রাম। বছরে এ অঞ্চলে মাংস উৎপাদন হচ্ছে ৬ লাখ ২ হাজার টন। এর মধ্যে মুরগির মাংস খায় বছরে গড়ে মাত্র ৩ দশমিক ৬৫ কেজি। একজন মানুষের প্রতিদিন দুধের চাহিদা প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম। সেই হিসাবে বছরে দুধের চাহিদা ১৪ লাখ টন। গত অর্থবছরে রংপুরে দুধ উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ টন।
দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে এ শিল্প এই অঞ্চলে অর্থনীতির চালিকাশক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৭, ২০০৯ এবং ২০১১ সালে বার্ড ফ্লুর ভয়াবহ সংক্রমণে রংপুরে এ শিল্পের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খামার বন্ধ হয়ে গেলেও এ শিল্পের অগ্রগতি থেমে থাকেনি। বেসরকারি পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ শিল্পে বিপ্লব ঘটেছে। পোলট্রি শিল্পকে কেন্দ্র করে পরিচালনা, পরিচর্যা, বাজারজাতকরণ এবং খাদ্য উৎপাদন কার্যক্রমের সুবাদে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে এ অঞ্চলে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারে ব্যবসা পরচিালনা করে হাজার হাজার উদ্যোক্তা স্বাবলম্বী হয়েছেন।
হাঁস মুরগীর আমদানীকৃত খাদ্য ভূট্টা, রাইস পালিশ, সোয়াবিন, আয়োডিন ও লাইফ স্টোন এর উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা হেেয়ছে। ইতিপূর্বে লাইফ স্টোন ামদানীতে কোন কর ছিল না। ফলে হ্যাচারি শিল্পে বড় ধরনের ধাক্কা এসে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে পোলট্রি শিল্পে ১০ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করায় এ শিল্প অগ্রসরে পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পোলট্রি মুরগির মাংসের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সব চেয়ে বড় প্রভাব ফেলেছে প্যাকেটজাত পোলট্রি ফিডের। মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংসের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির পর মধ্যবিত্তের খাবার হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল পোলট্রি মুরগির মাংস। ভ্যাট নির্ধারণ ও দাম বৃদ্ধির ফলে প্যাকেটজাত পোলট্রি ফিডের দাম বেড়েছে। নি¤œ ও মধ্য আয়ের সাধারণ মানুষ, যারা মাংসের স্বাদ পেতে পোলট্রিনির্ভর হয়ে পড়েছিল এখন অনেকেই মুরগির মাংসের স্বাদ নিতে ভুলে যাবে। ঝুঁকিতে পড়বে পোলট্রি শিল্প। এর বিপরীতে যেসব সাধারণ মানুষ পোলট্রির ওপর নির্ভর করত তাদের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বিকল্প উৎসের খোঁজ করতে হবে।
"