মীর আসলাম, রাউজান

  ২৫ জুন, ২০১৭

পাহাড়ি ঢলের আগ্রাসী স্রোতে বিধ্বস্ত রাউজান

বিগত প্রায় দেড় দশক ধরে কাজ করে যে রাউজানকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির উপজেলায় পরিণত করা হয়েছিল সেই রাউজানের একাংশ এখন বিধ্বস্ত জীর্ণশীর্ণ এলাকা। যেদিকে চোখ যায় শুধু ধ্বংসস্তূপ। ক্ষয়ক্ষতির শিকার মানুষের মাঝে হতাশা আর হাহাকার। রাউজানের ওপর এই ভয়াবহ আঘাত গত ১৩ জুন থেকে টানা এক সপ্তাহকাল বর্ষণের কারণে। পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির চাপে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সবকিছু। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার হলদিয়া, চিকদাইর, ডাবুয়া, উরকিরচর, নোয়াজিশপুর ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়ন বিধ্বস্ত করে দিয়ে পাহাড়ি পানির আগ্রাসী স্রোত গড়ায় পৌর এলাকাসহ উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও।

উপজেলার উত্তারাংশের ইউনিয়নের ওপর দিকে প্রবাহিত রয়েছে সর্তা ও ডাবুয়া খাল। দুটি খালের উৎপত্তি দুর্গম পার্বত্যাঞ্চল থেকে। প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ি পানি নামে খাল দুটি দিয়ে। এবার এই পানি, স্রোতের তীব্রতা এতই বিধ্বংসী ছিল যে, খাল দুটি নেমে আসা পানির চাপ সহ্য করতে না পেরে দুপাড়ের মজবুত বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়। এই অবস্থায় বাঁধ ভাঙ্গা পানির বিধ্বংসী স্রোতে ডুবিয়ে দেয় গোটা রাউজানকে। এই স্রোতের টানে ভেসে যায় পাঁচটি মানুষের তাজা প্রাণ, অসংখ্য ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট, ক্ষেত খামারসহ পুকুর দিঘির সব মাছ।

স্মরণকালের ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে যান রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। এসময় সঙ্গে ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এহেছানুল হায়দর চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন রেজা।

উপজেলা চেয়ারম্যান বলেছেন, তার ইউনিয়নের নতুন ইউপি ভবন, কয়েকটি স্কুল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। স্রোতের টানে প্রাণ হারিয়েছে তিনজন। রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ৮০শতাংশ।

চিকদাইর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রিয়োতোষ চৌধুরী বলেছেন, তার ইউনিয়নে একজনের প্রাণহানি ঘটেছে, বেশিরভাগ রাস্তাঘাট ও অনেক বাড়ীঘর ভেসে গেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়েছেন ডাবুয়ার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুর রহমান চৌধুরী।

উরকিরচরের চেয়ারম্যান ছৈয়দ আব্দুল জব্বার সোহেল বলেছেন, বৃষ্টির পানির স্রোতে এত ক্ষয়ক্ষতি তিনি আগে দেখেননি। তার মতে, কয়েকদিনের বৃষ্টি সাজানো রাউজান তছনছ করে দিয়েছে, প্রাণহানী ঘটেছে একজনের। এইভাবে ক্ষয়ক্ষতির কথা বলেছেন কদলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তসলিম উদ্দিন চৌধুরী।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, রাউজানে কৃষি খামারের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। মৌসুমী ক্ষেত খামারের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকা। মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ১১শ পুকুরের প্রায় ১২’শ কোটি টাকা মূল্যে মাছ ভেসে গেছে।

উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জানা গেছে, এলজিডি অধীনস্থ রাস্তার ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপক ও অকল্পনীয়। বিধ্বস্ত হয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের রাস্তাও। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করলে প্রায় এক’শ কোটি টাকায় দাঁড়াবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন রেজা রাউজানের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপারে বলেন, পাহাড় থেকে নেমে আসা স্রোতের টানে এই উপজেলায় পাঁচজনের প্রাণহানী ঘটেছে। উদ্ধার তৎপরতায় আরো সাত ব্যক্তির প্রাণ রক্ষা করা গেছে। সদ্য নির্মিত একটি ইউনিয়ন পরিষদ এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধসে গেছে তিনটি স্কুল। ব্যাপক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির শিকার উত্তারাংশের ইউনিয়ন সমূহের মানুষ। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে ১৩’শ ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হয়েছে। হলদিয়া, চিকদাইর ও ডাবুয়া এলাকায় সর্তা ও ডাবুয়া খালের ২৮টি পয়ন্টে বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে প্রচ- স্রোতের পানিতে সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, দুর্গত এলাকায় এই পর্যন্ত দুই’শ বা-িল ঢেউ টিন, নগদ ৬ লাখ টাকা, ২৫টন খয়রাতি খাদ্য, ৭১ টন ভিজিডি অধীনে দুর্গতদের দেয়া হয়েছে। এর বাইরে সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী উদ্যোগে সরবরাহ করা ৩০ টন খাদ্য দুর্গতদের কাছে বিতরণ করা হয়েছে।

রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই দুর্যোগ মনের মত করে সাজানো এই সুন্দর রাউজানকে জীর্ণশীর্ণ করে দিয়েছে। সর্বাধিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যোগাযোগ অবকাঠামো ও কৃষি খাত। তিনি বলেন, উপজেলায় বেশির ভাগ ইউনিয়ন সর্তা, ডাবুয়া খাল ও হালদা কর্ণফুলী নদীর সাথে। একারণে পানির চাপ পড়েছিল উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে। তিনি বলেন, রাউজানের এই ক্ষতি পূরণ করতে তিনি সর্বোচ্চভাবে চেষ্টা করেছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রালয়ে যোগাযোগ রক্ষা করে পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তিনি এই দুর্যোগকালীন সময়ে ব্যাংকগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণ মওকুফ, অথবা সহজ শর্তে পুনঋণ প্রদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist