চারণ গোপাল চক্রবর্তী, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা)

  ২০ জুন, ২০১৭

বেহাল সড়ক, যাত্রী-চালক সবাই সীমাহীন দুর্ভোগে

নেত্রকোনার দুর্গাপুর-শ্যামগঞ্জ সড়কটি দীর্ঘ তিন বছর ধরে বেহাল। ৩৬ কি.মি. পিচঢালা সড়ক শুধু নামেই। দুর্গাপুরবাসী যোগাযোগের প্রধান সড়কের এমন দুরবস্থায় প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন চরম ভোগান্তির।

জেলা শহর নেত্রকোনা, বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ এবং রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান সড়কটি দেখে সেটিকে সড়ক বোঝার কোনো উপায় নেই। মনে হয় যেন কাদাপানিতে ভরা কোনো ক্ষেত। সেখানে অসংখ্য ছোট, বড় গর্ত। তার ওপর জারিয়া-ঝাঞ্জাইল সেতু পুনরায় নির্মাণ করতে গিয়ে কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় সড়কটি দিয়ে কোনো যানবাহনই চলাচল করতে পারছে না। একনেক সভায় এই সড়ককে আঞ্চলিক থেকে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করে বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হলেও অজ্ঞাত কারণে আজও তা আলোর মুখ দেখেনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চলাচলের অনুপযোগী সড়কটিতে ছোট-বড় অগণিত গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। এই সুযোগে চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করলেন স্থানীয় লোকজন। আর চালকদের ভাষ্য, তারা বিকল্প রাস্তা হিসেবে কেট্টা-বাট্টা সড়ক দিয়ে যাত্রী পরিবহন করেন বলে ভাড়া একটু বেশি। অন্যদিকে মাত্র দুটি নৈশ কোচ চলছে দুর্গাপুর-কলমাকান্দা-ঠাকুরোকোনা-নেত্রকোনা-শ্যামগঞ্জ হয়ে ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটে। ৩৬ কিলোমিটারের বদলে যাত্রীকে পাড়ি দিতে হচ্ছে ৭৫ কি.মি. পথ। এতে অতিরিক্ত অর্থের পাশাপাশি মূল্যবান সময় ব্যয় হচ্ছে যাত্রীদের। পাহাড়ী কাঠ, কয়লা, বালি, নূড়িপাথর ও বাংলাদেশের একমাত্র খনিজ সম্পদ সাদা মাটি সহজলভ্যতার সুবাদে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এই রাস্তা ধরে চলে অগণিত ভারী যানবাহন। সেই সুবাদে জেলার সর্ব্বোচ্চ সরকারি রাজস্ব আয়ের অঞ্চল দুর্গাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয় সমগ্র বাংলাদেশের। ২০১৩ থেকে ২০১৬-এর এক সমীক্ষায় উঠে আসে এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ ট্রাক-লরি চলাচল করে। প্রকৌশলী মাসুদ খান সড়কটির এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেন অতিরিক্ত বালু ও নুড়িপাথর বোঝাই করা ট্রাকগুলো থেকে নির্গত পানিকে।

স্থানীয় লোকজন সংস্কারের দাবি নিয়ে একাধিকবার রাস্তায় নেমেও কোনো কিনারা পাচ্ছে না বলে জানান উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আসাদ। তিনি আরো জানান, দুর্গাপুর থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা সংকটাপন্ন বেশ কয়েক রোগীকে এই সড়ক দিয়ে নেওয়ার সময় গত তিন বছরে তাদের অনেকেই মারা গেছে। তবু কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। বাস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম ফাহমী ভূঁইয়া বলেন, সড়ক বেহাল। তাই বাস মালিকরা বাস বিক্রি করে দিচ্ছে বা অন্য কোনো রুটে চালাচ্ছে। তাতে এই সড়কের পরিবহন শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের বেশির ভাগই মানবেতর জীবন যাপন করছে। সরকার একটু সুদৃষ্টি দিলে এ অঞ্চলের পরিবহন সংশ্লিষ্ট এক হাজার পরিবার আবার প্রাণ ফিরে পাবে। বাস-ট্রাক শ্রমিক সমিতির সভাপতি ফজলু মিয়া বলেন, ‘আমরার শ্রমিকরার এহন কুনো কাজ নাই, ওরা কষ্টে আছে। সরকার চায়া দেখলে ঈদের আগে ব্রিজের কামডা হইতো। তাইলে খাইয়া-পইরা বাঁচতাম পারতাম।’ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষের কষ্টের কথা ভেবে আমি জেলার প্রধান প্রকৌশলীকে বারবার তাগাদা দিয়েছি। কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছি না।’ এ বিষয়ে নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে তারা অবগত আছেন। তিনি উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করেছেন যা ইতিমধ্যে আলোর মুখ দেখেছে। তিনি আরো জানান, মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তে এটি পর্যটন ও জেলার সর্বোচ্চ রাজস্ব আয় অঞ্চল হওয়ায় সড়কটিকে আঞ্চলিক থেকে জাতীয় মহাসড়ক হিসাবে ঘোষণা করে প্রকল্প ব্যয় পাস করেছে একনেক। ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মহাসড়কের কাজকে চারটি গ্রুপে ভাগ করে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। তবে, তিনটি গ্রুপের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, বাকি একটি গ্রুপকে আবার রি-টেন্ডার দেওয়া হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই কার্যাদেশ দেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist