কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ, সহস্রাধিক পরিবারে মানবেতর জীবনযাপন
কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার সদর ইউনিয়নের নিজামপুরের চেনা জনপদকে এখন মনে হয় অচেনা। উঁচু বেড়িবাঁধ কৃষিজমির চেয়েও নিচু হয়ে গেছে। তিন বছর আগের ব্লক ফেলে, পাইলিং দিয়ে ভাঙন রোধের চিহ্ন সামান্য টিকে আছে। শুকনো মৌসুমেও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর। চাষাবাদ বন্ধসহ সকল পরিবার পানিবন্দি দশায় পুরো মৌসুম। চলছে নৌকায় চলাচল। শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না চার মাস। স্থান পরিবর্তন করে নতুন জমিতে বাড়ি নির্মাণের সঙ্গতি না থাকায় এ জনপদে মানুষ এখন দায় ঠেকে বসতি রেখেছেন। শুরু হয়েছে বর্ষা মৌসুম। চলছে রমজান। আসছে ঈদ। তার আগেই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান ভুক্তভোগী মানুষদের। প্রয়োজনে নিজেরা শ্রম দিতে হলেও রাজি তারা।
জানা যায়, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিড়রের আঘাতে সাগর আর আন্ধারমানিক নদীর মোহনায় নিজামপুর গ্রামের অন্তত আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত প্রায় দুই কি.মি.। ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ভেসে যায় পুরান মহিপুর, কোমরপুর, সুধিরপুর, ইউসুফপুরের বাড়িঘর। যোগাযোগের সিলকোটের রাস্তাটি বিগত বছরের অস্বাভাবিক জোয়ারের তা বে ভেসে গেছে। চাষাবাদ বন্ধ থাকায় আবাদি জমিতে জমে গেছে স্যাওলা। সাগরের পানি প্রবেশ করে জমিতে লবণ জমে গেছে। হাঁস-মুরগির খাওয়া পর্যন্ত নেই। বর্ষায় রান্না তো দূরের কথা গোসল, পায়খানা করার সুযোগ নেই। যার সংগতি রয়েছে তিনি গ্যাসের সিলিন্ডারে ভাটার সময় কোনো মতে ভাত রান্না করে, বুটের ডাল দিয়ে দিন পার করছেন।
বাড়ি পাল্টাতে পাল্টাতে আর পেছনে সরানোর জায়গা নেই ষাটোর্ধ্ব আবদুল হক গাজীর। বিগত বছর কয়েকটি ব্লক দিয়ে ঢেউ সামলে নিতেন। এ বছর তাও নেই। পরিবার নিয়ে আছেন আন্ধারমানিক নদীর তীরে এ ভাঙনে। এ মানুষটি এখন নিঃস্ব। পাঁচজনের সংসারে এ মানুষটির ভরসা ছেলে বেল্লাল গাজী। একই অবস্থা হাতেম গাজী, ছলেমান গাজী, সালাম হাওলাদার, খলিল গাজী, মোস্তফা চৌকিদারসহ গ্রামটির দেড় শতাধিক পরিবারের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, নিজামপুরের বেড়িবাঁধ ভাঙার কারণে দুর্ভোগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বহু আগেই অবগত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
"