বগুড়া প্রতিনিধি

  ২৩ মে, ২০১৭

একটি সেতুর অভাব

বুক পানিতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যায় শিক্ষার্থীরা

এক হাতে বিদ্যালয়ের পাঠ্যবই উঁচিয়ে ধরেছে শিশুটি। অন্য হাতে চাচার হাত ধরে থাকে শক্ত করে। চাচার কাঁধে উঠেও নিজের ভার নিয়ন্ত্রণ করছে আলী বাবা। পাঁচ বছর বয়সী আলী বাবা প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অবশ্য কাঁধে নেওয়া ভাতিজাকে শক্ত করে এক হাতে ধরে ব্যালান্স তৈরি করছেন কৃষক আমজাদ হোসেন। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলে পার হচ্ছেন ইছামতি নদী। নদীর পানি পারি দেওয়ার এ চিত্র বগুড়ার ধুনট উপজেলার মাদারভিটা গ্রামের।

সবুজ ছায়া ঘেরা গ্রাম মাদারভিটা। ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের এ গ্রামের বুকজুড়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী। নদীর সঙ্গে এ গ্রামের মানুষের এক নিবিড় সম্পর্ক। তবে নদীটি গ্রামকে দু’ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে। বগুড়ার ধুনট উপজেলা সদরের সঙ্গে নদীর পশ্চিম তীরের যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। নদী পারপারে সেতু, সাঁকো বা নৌকা না থাকায় পূর্ব তীরের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। ফলে নদীর পানিতে ভিজেই পারাপার হতে হয় এলাকাবাসীকে। এদিকে, নদীর পশ্চিম তীরে রয়েছে মাদারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পারধুনট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসার জন্য ওই নদী পারাপার হতে হয়ে পূর্ব তীরের মানুষকে।

শিশু আলী বাবা মাদারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সরকারের দেওয়া নতুন বইয়ের ঘ্রাণ তাকে বিদ্যালয়ে যেতে উৎসাহিত করে। কিন্তু নদীর পানি ডিঙিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া তার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। পরিবারের সদস্যরা কাঁধে নিয়ে নদী পার করে দিলেই বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় আলী বাবার। রোববার তাকে চাচা আমজাদ হোসেন কাঁধে নিয়ে ইছামতি নদী পার করে দেন।

মাদারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া খাতুন, ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজিবুল ইসলাম, রিয়াদ হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের পাঠ্যবই উঁচিয়ে বুক পানি ভিজে ইছামতি নদী পার হতে দেখা যায়। বিদ্যালয় খোলা থাকলেই নদী পারাপারের এ দৃশ্য দেখা যায়। এ ছাড়া নদী পারাপারে ওই গ্রামের মানুষের জরুরি চিকিৎসা ও কৃষকের উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্র্থীরা যেমন বিদ্যা অর্জনে পানিতে ভিজে স্কুলের ক্লাসে যোগ দেয় ঠিক তেমনি এ গ্রামের কৃষক তার ফসল হাট-বাজারে বিক্রি করতে নদীর জলে ভিজে ফসল বিক্রি করে। বহুকাল থেকেই এমন চিত্র দেখে আসছে স্কুল শিক্ষার্থীসহ এলাকার মানুষ।

বগুড়ার ধুনট উপজেলা সদরের সঙ্গে ধুনট ও কাজীপুর উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষের দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য নদীর দুই পাশে সড়ক রয়েছে। কাজীরপুর উপজেলার পারুলকান্দি গ্রাম হয়ে নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত কাঁচা সড়ক রয়েছে। কিন্তু মাদারভিটা নদীর ওপর সেতু না থাকায় গ্রামের মানুষ তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। সেতু নির্মাণ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পূর্ব তীরের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন হবে। ধুনট উপজেলার মাদারভিটা গ্রামের কৃষক হাসেন আলী বলেন, গ্রামটাকে দুই ভাগ করে রেখেছে ইছামতি নদী। এ নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হলে গ্রামের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে এলাকার শিশুদের শিক্ষা অর্জনে এ সেতু অন্যতম ভূমিকা রাখবে। পানি ডিঙ্গিয়ে নদীর পারপারের ভয়ে অনেকে সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না। যুগ যুগ ধরে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও আজো এ সেতু নির্মাণ হয়নি। ২০১২ সাল থেকে গ্রামবাসীর পক্ষে সেতুর দাবিতে সরকারের বিভিন্ন দফতর, জনপ্রতিনিধিদের নিকট লিখিত আবেদন জানিয়েছি। অনেক তদবির করেও আজো কোনো সুসংবাদ ভাগ্যে জোটেনি।

ধুনট উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী আবু তালিম হোসেন বলেন, মাদারভিটা গ্রামে ইছামতি নদীর ওপর ১০০ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেছি। একটি বিশেষ প্রকল্পে ওই সেতুর অর্থ বরাদ্দের সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করি, অর্থ বরাদ্দ হলে মাদারভিটা গ্রামবাসীর এবং শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারের দুঃখ ঘুচবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist