সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জে মারকাজের নামে ব্যক্তির জমি জোরপূর্বক দখল
সুনামগঞ্জে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন জমি জবরদখল করে তাবলিগ জামাতের মারকাজ (কেন্দ্র) নির্মাণ চেষ্টা অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপি জেলা ইজতেমার জন্য জমি-মালিকদের নিকট থেকে জমির একাংশে একটি টিনের কাঁচাঘর নির্মাণ করে বর্তমানে সেটির দখল ছাড়ছেন না জেলা তাবলিগ জামাতের আমীর মাওলানা আনোয়ার হুছাইন। জমিটি নি¤œ আদালতের রায়ে মালিকানা প্রতিষ্ঠিত। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইজতেমা শেষ হওয়ার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও অস্থায়ী মারকাজ ঘরটি সরিয়ে না নিয়ে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন ওই জমি থেকে ২ একর ৩৬ শতাংশ জমি মালিকপক্ষকে না জানিয়ে মারকাজের জন্য বন্দোবস্ত পাওয়ার আবেদন করা হয়েছে। ইজতেমা শেষ হওয়ার একদিন পর জেলা প্রশাসকের কাছে এই দরখান্তটি করেছেন জেলা মারকাজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হুছাইন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায়, পর দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে ২০ মার্চ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুটের উপস্থিতিতে শালিস বৈঠক হয়। শালিসে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি জেলা প্রশাসনের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়। এদিকে, জমির মালিকপক্ষ ও তাবলিগ জামাতের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ যে কোন সময় সংঘাত সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। আর তাবলিগ জামাতের মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় একটি ধর্মীয় সংগঠনের নাম এ জাতীয় বির্তকে জড়ানোর কারণে তাবলিগ ভক্তরা বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জানা যায়, সুনামগঞ্জ শহরতলীর কুতুবপুর মৌজারদুই খতিয়ানে ২ একর ৮৬ শতাংশ জমি উত্তরাধীকার সূত্রে মালিক আজাদ মিয়া চৌধুরী প্রমুখ। পূর্বসূরীদের মৃত্যুর পর আজাদ মিয়া চৌধুরী প্রমুখ এই জমির ভোগদখল থাকাকালীন জমির মালিকানা নিয়ে সরকার পক্ষ আদালতে মামলা করে। ২০০৮ সালে সুনামগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে দায়ের করা স্বত্ব মোকদ্দমার (৫২/২০০৮) রায়ে ওই জমিতে সরকারি মালিকানার বিষয়টি বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপক্ষ এ নিয়ে জেলা জজ আদালতে আপিল (৬৫/২০০৯) করলে রাষ্ট্রপক্ষের দাবি নামঞ্জুর করে পূর্বের রায় বহাল রাখেন আদালত। বর্তমানে এ নিয়ে উচ্চ আদালতে সরকার পক্ষের দায়ের করা একটি সিভিল রিভিশন (নম্বর ৭১২/কন-১৩) মামলা বিচারাধীন আছে।
সুনামগঞ্জ জেলা মারকাজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হুছাইন জানান, আজাদ মিয়া ৬০ শতাংশ জমি মারকাজ নির্মাণের জন্য মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে দান করে এখন অস্বীকার করছেন।
জমির মালিক আজাদ মিয়া চৌধুরী বলেন, সরকারের সঙ্গে উচ্চ আদালতে চলা মামলা মাওলানা আনোয়ার হুছাইন নিষ্পত্তি করে দেবেন এমন শর্তে কিছু জমি মারকাজকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে যখন দেখালাম আমাদেরকে না জানিয়ে তিনি পুরো জমি বন্দোবস্ত চেয়েছেন তখন তো আর কোন কথা থাকে না।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, আইনগত দিক দেখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
"