কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
ছুটির দিনে সিবিএ নেতাদের গাছ কাটার মহোৎসব
কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার দাপটে কুষ্টিয়ায় সরকারী বিদুৎ অফিসের গাছ কেটে নিয়েছেন ক্ষমতাসীন সিবিএ নেতারা। বিদুৎ শ্রমিক কর্মচারী লীগের নেতাদের গাছ কাটায় প্রতিবাদ দূরের কথা, টুঁ শব্দ করার সাহস পায়নি কেউ। বন বিভাগ বলছে, এটি আইনত দ-নীয় অপরাধ। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি বলছেন, ‘এটাই এখানকার সিস্টেম’। আর সেখানকার মূল কর্মকর্তা বলেছেন, গাছ কাটার কোনো ঘটনাই নাকি ঘটেনি!
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একের পর এক কাটা হচ্ছে বড় বড় শিশু গাছ। করাত দিয়ে সেই গাছ খন্ড খন্ড করছেন শ্রমিকরা। কেউ ব্যস্ত ডাল কাটতে, কেউবা জড়ো করতে। ১০ জন শ্রমিকের এমন কর্মযজ্ঞ কুষ্টিয়ার ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) বিদ্যুৎ অফিস প্রাঙ্গণে। গত শুক্রবার ছুটির দিনে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৭টি গাছ কাটতে পেরেছেন তারা। পাশেই চেয়ার পেতে কাজের তদারকি করছেন সিবিএ ও বিদ্যুৎ কর্মচারী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক আনারুল হকসহ তাদের লোকজন। তাদের উপস্থিতিতে এর বিরুদ্ধে টু শব্দ করার সাহস নেই কারো।
কর্মরত একাধিক শ্রমিক জানান, গাছ কাটার জন্য দুই গ্রুপ শ্রমিকদের ডেকে এনেছেন বিদ্যুৎ কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক। গত শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ৬টি গাছ কাটা হয়েছে। দুপুরের মধ্যে আরো কয়েকটি গাছ কাটা হবে। ওই শ্রমিকরা জানান, এর আগে রেস্টহাউসের পাশের গাছ ও ডালপালা কাটা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি জায়গা থেকে বড় বড় গাছ কাটলেও অবহিত করা হয়নি বন বিভাগকে। এমনকি মূল্য নিরূপণ অথবা নিলাম প্রক্রিয়া করা হয়নি। প্রকাশ্যে গাছ কাটা হলেও নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলা বা প্রতিবাদ করার কারো সাহস নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ অফিসের এক কর্মচারী জানান, এখানকার একজন কর্মকর্তার ইন্ধনে এসব হয়। ক্ষমতাসীনদের সাথে দহরম মহরম তার। নেতাদের আর ওই কর্মকর্তার ভয়ে সব অন্যায় মেনে নিতে হয়। এ ব্যাপারে বনজদ্রব্য পরিবহন নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০১১’র গাছ কাটার বিধান লংঘন করে মূল্যবান সরকারী সম্পদ লোপাট করা নেতাদের দাবি, বিদ্যুৎ অফিসে এটাই নিয়ম ও রেওয়াজ।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কুষ্টিয়া ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক জানান, ‘এটাই এখানকার সিস্টেম। এ রেওয়াজই দীর্ঘদিন চলে আসছে।’
এ ব্যাপারে কর্মকর্তাদের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন। কুষ্টিয়া ওজোপাডিকোর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তবিবুর রহমান বলেন, ‘গাছ কাটার তথ্য সঠিক না। অফিস অভ্যন্তরে কোনো গাছ কাটা হচ্ছে না।’
কুষ্টিয়া বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আসলাম মজুমদার জানান, সরকারী অফিসের কোনো গাছ কাটতে হলে কর্তৃপক্ষকে ন্যূনতম জেলা পর্যায়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে হবে। বন বিভাগকে না জানিয়ে কোনোভাবেই গাছকাটা আইনসম্মত না। যা করা হয়েছে তা আইনত দ-নীয় অপরাধ। এর দায়ভার ওজোপাডিকো লিমিটেডের কর্তা ব্যক্তিদের নিতে হবে।
"