হাসানুজ্জামান তুহিন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

প্রসেস মিলের বর্জ্যে মারাত্মক হুমকিতে পরিবেশ

দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরসহ পাবনা সিরাজগঞ্জের শত শত প্রসেস মিলের বর্জ্যে মারাত্মক দূষণের কবলে পড়েছে যমুনার শাখানদী করতোয়া। ফলে বুড়িগঙ্গা নদীর মতো উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ করতোয়া নদীরও একই দশা দেখা দিয়েছে। তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ এলাকা পাবনা-সিরাজগঞ্জের অগণিত সূতা প্রক্রিয়াজাতকরণ এসব প্রসেস মিল কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত পানিতে এ এলাকার নদী-নালা, খাল, বিল ডোবা ও জলাশয়ের পানি দূষিত হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের করতোয়া নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে। ফসলি জমিতে সেঁচ কাজে এসব পানি ব্যবহারের ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এছাড়াও জীবজন্তুদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। ক্ষতিকারক ও বিরূপ প্রভাব প্রতিক্রিয়া পড়ছে পরিবেশের ওপর। ফলশ্রুতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এলাকাবাসী।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সকল কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত দূষিত পানি অপসারণে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, দেশের তাঁতসমৃদ্ধ শাহজাদপুরসহ পাবনা সিরাজগঞ্জ এলাকায় শতশত প্রসেস মিল, সুতার ডাইং ও তাঁতীদের ব্যাক্তিগত রং-সূতার কারখানায় সূতা প্রক্রিয়াকরণের পর থেকে যাওয়া বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশ্রিত দূষিত বর্জ্যে করতোয়া নদী ও খাল-বিলের পানিতে মিশে পানি চরমভাবে দূষিত হচ্ছে। স্থানীয় তাঁতী নেতৃবৃন্দ ও তাঁতীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ জনপদ পাবনা সিরাজগঞ্জে শত শত ডাইং, প্রসেস মিল ও হাজার হাজার ব্যক্তিগত সূতা রং ও প্রক্রিয়াজাত কারখানা রয়েছে। একেকটি ডাইংয়ের প্রতিটি বয়েলে দিনে প্রায় ৪শ’ বান্ডিল সূতা প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ওই ৪শ’ বান্ডিল সূতা প্রক্রিয়াজাত করতে বিপুল পরিমানে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার এ অঞ্চলে গড়ে ওঠা হাজার হাজার তাঁত কারখানায় সপ্তাহে অন্তত এক দিন বিভিন্ন কেমিক্যেল দিয়ে সূতা রং ও প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। এসব ডাইং, প্রসেস মিল ও তাঁতীদের ব্যক্তিগত সূতা প্রক্রিয়াজাত কারখানায় সোডা, সাবান, হুইল পাউডার, নিসপেল তেল, কষ্টিক, মাসরাইজ্ড ওয়েল, ব্লিচিং পাউডার, নীল, গ্লেসসহ বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে। পানিতে এসব কেমিক্যেল মিশ্রণ করে ও ক্ষেত্র বিশেষে বয়েল পানির সাথে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যেল ব্যবহার করে সূতা রং ও প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। এসব প্রসেস মিলের কেমিক্যেল মিশ্রিত দূষিত পানি করতোয়া নদীসহ খাল বিলে ফেলা হচ্ছে। যা জলাশয়ে গিয়ে পানির রং পরিবর্তন হয়ে কোথাও লালচে, কোথাও কালচে বা কোথাও নীলাভ বর্ণ ধারণ করছে।

বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, তাঁতসমৃদ্ধ পাবনা সিরাজগঞ্জ এলাকায় শত শত ডাইং, প্রসেস মিল ও ব্যক্তিগত তাঁতীদের সূতা রং ও প্রক্রিয়াজাত কারখানার বর্জ্য নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবা ও জলাশয়ের পানি এতটাই দূষিত হচ্ছে যে এসব জলাশয় নির্র্ভর মাছ, কীটপতঙ্গসহ বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তুও আবাসস্থল দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে।

শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক আজাদ রহমান জানান, ‘প্রসেস মিলের বর্জ্যে করতোয়া বহু নদী ও নদী তীরবর্তী জীববৈচিত্র্য হুমকির সন্মুখীন হয়ে পড়েছে। এ কারণে নদী, নালা, খাল, বিল ও জলাশয়ে আর দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। অতীতে করতোয়া নদীসহ এসব জলাশয়ে পানিকাওরসহ ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির পদচারণা পরিলক্ষিত হলেও পানিদূষণ দিন দিন মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব পাখির আর দেখা মিলছে না। গবাদী পশুপাখি দূষিত এসব পানি পান করে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে মানবদেহে নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। এই দূষিত পানি ব্যবহারে ক্যান্সারের মতো মরণঘাতি রোগেও আক্রান্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা ও বেশ ঝুঁকি রয়েছে। সেঁচকাজে এসব দূষিত পানি ব্যবহারে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। প্রসেস মিলের বর্জ্যে করতোয়া নদীর পানি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রং ধারণ করেছে। অনেক স্থানে দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে সেখানে পানি দিয়ে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এসব দুর্গন্ধ বায়ুমন্ডলে মিশে বায়ুমন্ডলকেও দূষিত করে তুলছে। ফলে করতোয়া নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে পরিবেশের ওপর পানিদূষণের মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। পরিবেশের ভারসাম্যতা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সকল প্রসেস মিলে শোধনাগার বাধ্যতামূলক করাসহ কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণ খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist