বিশ^জিৎ দাস, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার)

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৭

কুলাউড়ার ৩৫ গ্রাম জুড়ে বিদ্যুৎ লাইনের মৃত্যুফাঁদ

চার বছরে ১০ মৃত্যু, ৫০ আহত

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ৩৫টি গ্রামে এক যুগ থেকে পিডিবির প্রায় ৫০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইনের কারণে গ্রামের মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত ৪ বছরে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইনে স্পৃষ্ট হয়ে ১০ জন মারা গেছেন। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে অর্ধশত মানুষ। বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করলেও কোন সুফল পায়নি এলাকাবাসী।

সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের গাজীপুর, হাসনপুর, প্রতাবী, বনগাঁও, বালিচিরি, গুতগুতি, লক্ষ্মীপুর, বনগাঁও (২), শংকরপুর, ঝিমাই পুঞ্জি, কর্মধা ইউনিয়নের হাসিমপুর, বাবনিয়া, বেরী, কোনাগাঁও, নোনা, নলডরী, মহিষমারা, কান্দীগাঁও, গুতুমপুর, রাঙ্গিছড়া বাজার, ফাড়ি বাগান, কালিটি চা-বাগানে, রাউৎগাঁও ইউনিয়নের কবিরাজী, পালগ্রাম, রস্তুমপুর, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের পুরশাই গ্রামসহ প্রায় ৩৫ টি গ্রামে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইন।

এসব গ্রামের অধিকাংশ বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে সুপারিগাছ ও বাঁশের খুঁটির ওপর। এসব খুটিতে বিদ্যুতের তারগুলো খুবই দুর্বল। প্রতিদিনই বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়ে আগুন লেগে দূর্ঘটনা ঘটছে নয়তো খুঁটি ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কখনো বা দিনের পর দিনও। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎহীন হয়ে যায় পুরো এলাকা। ঘটে কোন না কোন এলাকায় দূর্ঘটনা। অনেক সময় বাধ্য হয়ে এগুলো স্থানীয় গ্রাহকরা নিজেদের উদ্যোগেই সাময়িকভাবে মেরামত করে নিতে বাধ্য হন। বর্ষা মৌসুমে একটু দমকা বাতাসেই ভেঙে যায় বাশের খুঁটিগুলো। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে গ্রামের পর গ্রাম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৪ বছরে নারী ও শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পঙ্গুত্ব বরণ করছে অর্ধশত মানুষ। এছাড়া বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রায় শতাধিক গরু-মহিষ ও ছাগলের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় থেকে স্থানীয় এলাকাবাসী উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ ওই বিদ্যুৎ লাইনগুলো মেরামতের দাবি জানিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। যার ফলে চাপা ক্ষোভ বিারজ করছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

তাৎক্ষণিক অনুসন্ধানে জানা যায়, পশ্চিম প্রতাবী গ্রামের একই পরিবারে কাশেম চৌধুরী (১২) ও কামিল চৌধুরী (৭) নাম দু’ভাই জমিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। ছেলে শোকে এখনও আর্তনাদ করে বেড়াচ্ছেন তার বাবা। এছাড়া লক্ষীপুর গ্রামের সুনু মিয়া (৪৫), আইন উল্লাহর মেয়ে মুমিনা বেগম (২২) এবং কর্মধা গ্রামের হায়দর আলীর স্ত্রী আজিরুন বেগম (৩৫) ছেড়া তারে স্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইসলামগঞ্জ ফিডারের অন্তর্ভুক্ত গাজীপুর-কালিটি, রাঙ্গিছড়া বাজার হয়ে মিরবক্সপুর, ঘাগটিয়া-দানাপুরের মধ্য দিয়ে ১১ হাজার ভোল্টেজের লাইনটি বেরী গ্রাম পর্যন্ত গেছে। কিন্তু এরপর থেকে সেই লাইনটিও খুবই ঝুঁকিপূর্ণভাবে রয়েছে। দীর্ঘদিনেও হয়নি কোন সংস্কার কাজ। বাবনিয়া-হাসিমপুর নিজামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আহসান উদ্দীন, কর্মধা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক অজয় দেব, কবিরাজি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ হোসেন ভূইয়া ও হাসিমপুর এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন সহ প্রায় সব এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকাগুলোর বিদ্যুৎ লাইন ও খুটিগুলো রয়েছে খুবই দুর্বল। সন্ধ্যার পরে লো ভোল্টেজের কারণে লাইট মিট মিট করে জ¦লে।

করিবাজী গ্রামের এলাকাবাসীর পক্ষে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আবেদনকারী মো. তাজুল ইসলাম জানান, কবিরাজী এলাকায় যদি আলাদা একটি ট্রান্সফরমার বসানো হয় তাহলে জনবহুল ওই গ্রামসহ ৫টি গ্রামের বিদ্যুতের সমস্যা লাঘব হবে। এসব সমস্যা বিদ্যুৎ বিতরণ সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প নামের নতুন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎলাইনগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামতের দাবি জানান।

এদিকে জনস্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে রাউৎগাঁও ইউনিয়নের কবিরাজি এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে কতিপয় কাজ প্রকল্পভুক্তকরণের জন্য আব্দুল মতিন এমপি ২০১৫ সালের মার্চ মাসে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু তাতেও কোন সুফল হয়নি।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলীর মোজাফফর হোসেনের সরকারি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে ফোনটি বন্ধ দেখায়।

মৌলভীবাজার অ্যাসিসটেন্ট চিফ ইঞ্জিনিয়ার দুলাল হোসেন জানান, এলাকাবাসী একটি আবেদন করেছে। আমরা পরবর্তীতে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করে দেবো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist