গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
লোক নেই তাই স্টেশন বন্ধ
লোকবল সংকটে ময়মনসিংহের তারাকান্দার উপজেলার বিসকা ও গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর রেলস্টেশনের দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রয়েছে। এমনকি দুটি স্টেশনে ট্রেন চলাচলে নেই কোনো সংকেত ব্যবস্থা। এতে করে ট্রেনের টিকিট, সময়সূচী, মালপত্র বুকিং করতে গিয়ে নানা ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। পাশাপাশি ট্রেনের টিকিট বিক্রি না হওয়ার কারণে দুই স্টেশনের যাত্রীরা বিনা টিকিটে ট্রেনে চলাচল করে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। রেলওয়ে একটি সূত্রে জানা গেছে, বিসকা বি শ্রেণির ও বোকাইনগর ডি শ্রেণির স্টেশন। তাই এগুলোর বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের নজর কম। গৌরীপুর রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গৌরীপুর ও শম্ভুগঞ্জ রেলস্টেশনের মাঝামাঝি স্টেশনটির নামে বিসকা। দিনে ঢাকা ও চট্রগ্রামগামী আন্তঃনগর সহ ২৮টি ট্রেন চলাচল করে এই স্টেশন হয়ে। তবে শুধুমাত্র লোকাল ট্রেনগুলো স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্টেশনের বুকিং অফিস, স্টেশন মাস্টার অফিস, রিলে রুম, ব্যাটারি রুম, টিকিট কাউন্টার তালাবদ্ধ। যত্রতত্র মলত্যাগ করায় মহিলা বিশ্রামাগারটি শৌচাগার পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন এই স্টেশন হয়ে প্রায় সহ¯্রাধিক যাত্রী ময়মনসিংহ, গৌরীপুর, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, পূর্বধলা, জারিয়া, নেত্রকোণা, মোহনগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেন। কিন্তু দাপ্তরিক কাজ বন্ধ থাকায় যাত্রীদের কোথাও যেতে হলে অনেক আগে থেকেই ট্রেনের জন্য স্টেশনে এসে অপেক্ষা করতে হয়। পাশাপাশি বিনা টিকিটে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেক ট্রেনযাত্রী হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
বিসকা গ্রামের যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, কোনো যাত্রী যদি বিসকা স্টেশন থেকে জারিয়া ট্রেনে চড়ে ময়মনসিংহ যায় তাহলে রেলওয়ে টিটি তাদের বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠার কারণে জারিয়া থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত টিকিটের টাকা জরিমানা করে। অনুরূপ টাকা জরিমানা করা হয় মোহনগঞ্জ, ভৈরব সহ অন্যান্য লোকাল ট্রেনেও।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, স্টেশন বন্ধ থাকার কারণে মালামাল বুকিং করতে হয়ে শম্ভুগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে। এতে করে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শম্ভুগঞ্জ স্টেশন মাস্টার বলেন, ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে রেলওয়ে প্যানেল বোর্ড বিসকা স্টেশন ডিসকানেক্ট করায় ক্রসিং ও রেল সংকেত ব্যবস্থা বন্ধ হয়। ২০১৩ সালের শেষ দিকে স্টেশন মাস্টার শামছুল আলম অবসরে যাওয়ার পর থেকে বিসকা স্টেশন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে মালামাল এখান থেকে বুকিং করতে হয়।
বিসকা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, বিসকা রেলস্টেশন চালু করার জন্য মানববন্ধন সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। দ্রুত স্টেশন চালুর পাশাপশি এই স্টেশনে যেন ঢাকা ও চট্রগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেন থামে সে দাবিও জানাচ্ছি।
এদিকে গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাঝামাঝি বোকাইনগর স্টেশনের অবস্থা আরও খারাপ। স্টেশন মাস্টার, বুকিং অফিস ও বিশ্রামাগার কক্ষের ভিতর মানুষ যত্রতত্র প্র¯্রাব-পায়খানা করছে। পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে স্টেশনটি রাতে মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
বোকাইনগর গ্রামের যাত্রীরা জানান, এক যুগের বেশি সময় ধরে কোনো ধরনের দাপ্তরিক কার্যক্রম নেই। নেই কোনো স্টেশনমাস্টার। প্রতিদিন আন্তঃনগর সহ ৬টি ট্রেন চলাচল করলেও শুধুমাত্র লোকাল ট্রেন গুলো নিয়ম রক্ষার জন্যই এখানে থামে। প্রতিটি ট্রেন এক মিনিটেরও কম সময় স্টেশনে অবস্থান করে ফলে অনেক যাত্রীই স্বল্প সময়ের মধ্যে ট্রেনে উঠা-নামা করতে পারেনা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ অঞ্চলের রেলওয়ে পরিবহণ পরিদর্শক সাজ্জাদ হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, লোকবল সংকটের কারণে এই দুটি স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অচিরেই স্টেশন মাস্টার নিয়োগ করে বিসকা স্টেশন চালু করা হবে। তবে বোকাইনগর স্টেশন চালুর বিষয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।
"