সালাহ্উদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)

  ১৪ জুলাই, ২০২০

ধলাই নদীর ২২ চর অপসারণ কমলগঞ্জে কমেছে বন্যার ঝুঁকি

বর্ষায় ভারী বর্ষণ আর উজানে সীমান্তের ওপর থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় প্রতি বছর ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে বন্যার সৃষ্টি হতো। গত বছর নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধসহ ২২টি চর অপসারণ করায় এবার কমলগঞ্জে বন্যার ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে গেছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এ উদ্যোগে আশার আলো দেখছেন উপজেলাবাসী ও কৃষকরা।

কমলগঞ্জে ধলাই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ আঁকাবাঁকা ও ইউ-আকৃতির প্রতিরক্ষা বাঁধ এলাকাসহ বেশ কয়েকটি চর থাকায় বর্ষা মৌসুমে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতো। এমনকি ভারী বৃষ্টি হলে ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল পানিতে ধলই নদী ফুলে-ফেঁপে ওঠে। এ সময় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাঁধ ভেঙে গ্রামের বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হতো। এজন্য ধলাইকে ‘কমলগঞ্জের দুঃখ’ বলা হতো। এ থেকে মুক্তির জন্য নদী খনন করে নব্য ফিরিয়ে আনা ও প্রতিরক্ষা বাঁধ সংস্কার করের দাবি জানিয়ে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে তারা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙন রোধ ও জেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও ছড়ার খননের একটি প্রস্তাবনা কেন্দ্রীয় পাউবোর উচ্চপর্যায়ে পাঠায় মৌলভীবাজার পাউবো। ‘দেশের ৬৪টি জেলার খাল, জলাশয় ও নদী খনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়)’ আওতার কলমগঞ্জে বন্যা সমস্যা সমাধান ও ধলই নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি প্যাকেজে অনুমোধন করে পাউবো। এর অংশ হিসেবে গত শুবনো মৌসুমে ২২টি স্থানের বড় চর অপসারণ করা হয়।

এদিকে চর অপসারণের ফলে গত ৪ ও ৫ জুন ভারী বৃষ্টির সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে ধলাইয়ের পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু চর অপসারণের ফলেও এবার প্রতিরক্ষা বাঁধে নতুন করে কোনো ভাঙন দেখা দেয়নি। স্থানীয়রা এই তথ্য জানান।

মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান পুস্প কুমার কানু বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙনে হিরামতি, পাটনিকোনা ও শিমুলতলা গ্রাম এলাকার মানুষসহ মাধবপুর ইউনিয়নের ১৫-২০ গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করত। সাম্প্রতিক পাউবো ধলাইয়ের চর অপসারণ করায় এলাকার বাঁধে কোনো ভাঙন দেখা দেয়নি। তিনি আরো বলেন, মাধবপুর ইউনিয়নে কয়েকটি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ইউ-আকৃতির হওয়ায় ঢলের স্রোত বেশি লাগে। এর স্থায়ী সমাধান হিসেবে এসব এলাকায় পাথরের ব্লক স্থাপন জরুরি বলে তিনি মনে করেন। একই অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন কমলগঞ্জ পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ। পৌরসভা এলাকার আলেপুর এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে স্থায়ীভাবে পাথরের ব্লক স্থাপানে পাউবোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, গত বছরও ধলই প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। নদীর চর অপসারণ করায় এ বছর আর এ ঝুঁকি দেখা যায়নি। তিনি আরো বলেন, প্রতিরক্ষা বাঁধের অধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাথরের ব্লক স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী। জানতে চাইলে প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, কমলগঞ্জবাসীসহ বিভিন্ন মহলের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ধলাই নদী খনন ও বাঁধ সংস্কার করার। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ড ধলাই নদীর ২২টি স্থানের চর অপসারণ করেছে। তা ছাড়া আপদকালীন সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বালুভর্তি জিও বেগ স্থাপনসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কাজ চলমান রয়েছে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের বন্যা ভোগান্তির অনেকটা কমে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close