শাহাদাত হোসেন মনু, ঝালকাঠি

  ১৪ জুলাই, ২০২০

পেয়ারার ফলনে বিলম্ব হতাশায় ঝালকাঠির চাষি

আষাড় মাসের শেষের দিকেও শুরু হয়নি দক্ষিণাঞ্চলে ‘বাংলার আপেল’ খ্যাত মিষ্টি পেয়ারার সমারোহ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝালকাঠিসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৫৫ গ্রামে উৎপাদিত এই মিষ্টি পেয়ারা ফলনে বিলম্ব হচ্ছে। একদিকে করোনার ছোবল, অপরদিকে নির্দিষ্ট সময়ে পেয়ারার ফলন পরিপক্ক না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষীরা। পেয়ারা পরিপক্ক হতে আরো ১৫ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তারা।

ঝালকাঠি সদর উপজেলা, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি ও বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলার ৫৫ গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে মিষ্টি পেয়ারা রাজ্য। প্রতিবছর আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস এলেই পেয়ারার কারণে পাল্টে যায় ওই অঞ্চলের চিত্র। পেয়ারা বেচাবিক্রির জন্য ওইসব এলাকার খালে রয়েছে ভাসমান বাজার। প্রতিদিন শত শত নৌকায় চাষীরা আসে পেয়ারা বিক্রি করতে। ট্রাক ও বড় বড় ট্রলার নিয়ে আসেন পাইকাররা পেয়ারা কিনতে।

এছাড়া প্রাকৃতিক অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণ পিপাসুরা। শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয়, বাংলাদেশে প্রবাসী বিদেশী অতিথিরাও আসেন উপভোগ করতে।

স্থানীয়দের কাছে জানা গেল, এ অঞ্চলের ‘সবচেয়ে বড়’ ভাসমান হাট এটি, যা সারা দেশেই অনন্য। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাজার এটি। এছাড়াও পাশের পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির (নেছারাবাদ) আটঘর, কুড়িয়ানা, আতা, ঝালকাঠির মাদ্রা। এসবই পিরোজপুর সন্ধ্যা নদী থেকে বয়ে আসা একই খাল পাড়ে অবস্থিত। যথাসময় বৃষ্টি না হওয়ায় আষাঢ় মাস শেষের দিকে হলেও এখন পর্যন্ত পেয়ারা পরিপক্ক হয়নি। তাই ভীমরুলী পেয়ারার ভাসমান হাটে পাকা পেয়ারার সমারোহ নেই। দুই সপ্তাহ ধরে পেয়ারা বাগান এলাকায় যথেষ্ট বৃষ্টি ঝরলেও এপ্রিল ও মে মাসের শুরুতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় এ ফলন বিলম্ব হচ্ছে।

ভীমরুলী এলাকার পেয়ারা চাষী গৌতম মিস্ত্রি। তিনি জানান, আমরা কয়েক পুরুষ পেয়ারা চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করি। প্রতিবছরের চেয়ে এ বছর ফলন কম ধরেছে। ফলন যা আসছে তাও পরিপক্ক হতে দেরী হচ্ছে। একদিকে করোনার কারণে অন্যসব উপার্জন আমাদের বন্ধ। শুধু পেয়ারার দিকে তাকিয়েই দিন গুনছি। কখন পেয়ারা পাকতে শুরু করবে আর কবে তা বিক্রি করতে পারবো।

ফলন দেরীতে আসার কারণ হিসেবে গৌতম মিস্ত্রি পূর্বপুরুষদের কথিত মতের বর্ণনা দিয়ে জানান, এ বছর বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে তেমন বৃষ্টি হয়নি। যা হয়েছে তাও আবার উত্তর-পশ্চিম দিকের ঠা-া বৃষ্টি। ওই বৃষ্টির কারণে পেয়ারা গাছে ফুল দেরীতে আসছে। যদি পূর্ব দিকের বৃষ্টি হতো তাহলে তা একটু গরম থাকতো। আর পেয়ারা গাছেও ফুল তাড়াতাড়ি আসতো। একই অভিজ্ঞতা কথা জানান আদমকাঠি গ্রামের পেয়ারা চাষী প্রেমানন্দ মন্ডল (৭০)। এবছর আষাঢ়ের শেষ প্রায়, শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহে পেয়ারা তোলার আশা করছেন তারা।

ডুমুরিয়া গ্রামের পঙ্কজ বড়াল জানান, প্রতিবছর সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে অথবা আষাঢ় মাসের প্রথম দিকে পেয়ারা পাকতে শুরু করে। এবছর পেয়ারা গাছে ফুল দেরীতে আসায় পেয়ারা পাকতেও দেরী হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তূলনায় এবছর ফলনও কম আসছে। একদিকে করোনার কারণে পাইকার, ফরিয়া কম আসবে তাই পেয়ারা সরবরাহ করতে চাহিদাও কম থাকবে। অন্যদিকে চাহিদা ও সরবরাহের সুযোগ কম থাকায় ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার আগাম হতাশা প্রকাশ করেন পঙ্কজ বড়াল।

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ জালাল। পেয়ার ফলন সম্পর্কে প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পেয়ারার ফলনে বিলম্ব হচ্ছে। প্রতিবছর এমন সময় কয়েকশ মন পেয়ারা বিক্রি করতে পারে চাষীরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত পেয়ারা পরিপক্ক হয়ে পাকতেও শুরু করেনি। আরো ১৫ দিন সময় লাগবে পেয়ারা পাকতে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close