নড়াইল ও কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ১২ জুলাই, ২০২০

বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় খাদ্য গুদামে অনাগ্রহী কৃষক

নড়াইল ও সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ

নড়াইল জেলায় ধান ও চাল সংগ্রহে জেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কৃষকদের সাড়া মিলছে কম। বাজারে ধানের মূল্য ভালো থাকায় তারা এবার গুদামে ধান দিতে আগ্রহী কম। গত ১ মাসে নড়াইলে ৯ দশমিক ৮১ ভাগ ধান এবং ৫২ দশমিক ১৫ ভাগ চাল সংগ্রহ হয়েছে। মোট ৪১ জন মিলারের মধ্যে ৭ জন তাদের চুক্তিবদ্ধ চাল দিয়েছে। ১৪ জন মিলার এখনও পর্যন্ত এক ছটাক চাল দেয়নি।

একই অবস্থা সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা খাদ্য গুদামের। অনেক কৃষক লটারিতে নির্বাচিত হলেও প্রচারণার অভাবে তারা জানেন না তাদের নাম লটারিতে এসেছে। বোরো ধান আবাদ না করলেও সে সমস্ত কৃষকের নাম লটারিতে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েক কৃষক।

নড়াইল প্রতিনিধি জানান, জেলায় এবার মোট ৮ হাজার ৮১ মেট্রিকটন ধান এবং ৪ হাজার ৮৬ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হবে। এ পর্যন্ত ৭৯৩ মে.টন ধান ও ২ হাজার ১৩১ মে.টন চাল সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে। আগামি ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ ধান ও চাল সংগ্রহ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানকে সফল করতে জেলা প্রশাসন এবং খাদ্য বিভাগ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা জানান, ইতোমধ্যে যেসব মিলার ও কৃষক গুদামে ধান দিয়েছেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের উৎসাহ দিতে ৩ জন মিলারকে আমরা সংবর্ধনা দিয়েছি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মনিরুল হাসান জানান, এবারই প্রথম এমপি মাশরাফি বিন মুর্তজার দেওয়া ২টি ট্রাকে কৃষকের ঘরে গিয়ে ধান ক্রয় এবং ধানের মূল্য হিসেবে চেক প্রদান করছি।

নড়াইল পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের ভাটিয়া এলাকার কৃষক কোহিনুর রহমান, বিন্দু রহমান ও আরতি দাস জানান, এবার ধান বাজারে মন প্রতি ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। সরকার দাম দিচ্ছে ১ হাজার ৪০ টাকা। এর মধ্যে বহন খরচ আছে। এছাড়া ধান পরিস্কার ও নির্দিষ্ট আর্দতা ঠিক করতে গেলে লোকসান হয়ে যায়। তবে এবার বাড়িতে এসে ধান নিয়ে গেছে বিধায় আমাদের তা পুষিয়ে গেছে।

কামারখন্দ প্রতিনিধি জানান,

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ মে উপজেলায় অভ্যন্তরীণ বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করা হয়। গত ৪ জুন ১১ হাজার ৩৩৯ কৃষকের মধ্যে লটারিতে ১ হাজার ২৫০ কৃষককে নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের প্রায় ২ মাস হলেও মাত্র ২০ জন কৃষক সরকারি গুদামে ধান দিয়েছেন। নির্বাচিতদের কাছ থেকে প্রতি মণ ১ হাজার ৪০ টাকা দরে ১ হাজার ২৫০ মেট্রিকটন বোরো ধান সংগ্রহ করার কথা থাকলে এ পর্যন্ত ২০ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে।

লটারিতে নির্বাচিত উপজেলার নান্দিনামধু গ্রামের কৃষক রওশন আলী জানান, সরকারি গুদামে ধান দেওয়ার জন্য লটারিতে নির্বাচিত হয়েছি সেটাই তো আমি জানি না। এখন জানলাম, সরকারি গুদামে ধান দেব। একই গ্রামের নির্বাচিত আরেক কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, আমি বেশি দামের আশায় ধান শুকিয়ে ঘরে মজুদ করে রেখেছি। আগামীতে দাম বাড়লে পরে বিক্রি করবো। একই গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কৃষক জানান, লটারিতে যাদের নাম এসেছে, এদের মধ্যে অনেকেরই এক ডিসিমাল জমিও নেই। তাছাড়া এরা বোরো মৌসুমে ধান আবাদ করে নাই।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ডালিম কাজী জানান, সরকার কৃষককে যে দাম দিচ্ছে, তার চেয়ে ভাল দামে তারা খোলা বাজারেই বিক্রি করছেন, যে কারণে কৃষক ধান সরকারি গুদামে দিচ্ছেন না। প্রচারণার অভাবের ব্যাপারে তিনি জানান, উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রত্যেক ইউনিয়নে লটারিতে নির্বাচিত কৃষকদের তালিকা দিয়ে দিয়েছি। প্রয়োজনে আমরা মাইকিং করে কৃষকদের জানাবো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত জানান, কৃষকের নিজস্ব জমি না থাকলেও যদি জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন আর সেই কৃষক যদি লটারিতে নির্বাচিত হন, তাহলে সে কৃষক সরকারি গুদামে ধান দিতে পারবেন।

জানতে চাইলে ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাজারে ধানের মূল্য ও সরকার কর্তৃক ধানের মূল্য কাছাকাছি হওয়ায় হয়তো কৃষক ধান সরকারি গুদামে দিচ্ছেন না। ১ হাজার ২৫০ মেট্রিকটনের মধ্যে আমরা ২০ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করতে পেরেছি। এ বিষয়টি সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা পরবর্তীতে যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close