মামুন আহমেদ, বাগেরহাট

  ১০ জুলাই, ২০২০

মোংলা বন্দরে রাস্তার দুই পাশে ট্রাকের জট

বন্দরের পৌর ট্রাক টার্মিনাল ১ মাস ধরে বন্ধ

বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের নিজস্ব জমিতে নির্মিত পৌর ট্রাক টার্মিনাল হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে শিল্প এলাকা জুড়ে। এখন পার্কিংয়ের জায়গা না পেয়ে এখন রাস্তার দুইপাশে রাখতে শুরু করেছে বন্দরের শিল্প এলাকার বিভিন্ন কলকারখার মালামাল পরিবহণকারী গাড়ি।

এদিকে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়ায় অন্যান্য যানবাহন চলাচলেও বিঘœ হচ্ছে, পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশংকাও বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে রাস্তার উপর ও পাশে গাড়ি রাখায় রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

জুনের ৭ তারিখে পৌর ট্রাক টার্মিনালটি বন্ধ করে দেওয়া হয় স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে। তখন থেকেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হাইওয়ের টোল আদায়কৃত টার্মিনাল বন্ধের নিদের্শনা থাকলেও ভুল বুঝাবুঝির কারণেই বন্দরের নিজস্ব এলাকায় নির্মিত টার্মিনালটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে টার্মিনাল বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। টার্মিনালের আয় দিয়ে পৌর কর্মচারীদের বেতনসহ পৌরবাসীর সেবায় ব্যয় করা হতো। অচিরেই টার্মিনালটি চালু না হলে পৌর কর্মচারীদের বেতন দেয়া বন্ধ হওয়াসহ নাগরিক সেবাও বিঘিœত হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করে দিগরাজ এলাকায় প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করে মোংলা পোর্ট পৌরসভা। ২০১৮ সালে ১ মে টার্মিনালটির উদ্বোধন পর বন্দর ও শিল্প এলাকার সব ট্রাক এখানেই পার্কিং শুরু হয়। গত তিন বছর ধরে এটাই চলছিল। সেখান থেকে সিরিয়াল অনুযায়ী বিভিন্ন ফ্যাক্টরির মালামাল নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতো ট্রাকগুলো। ওই টার্মিনাল থেকে বছরে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আয়ে করতো পৌর কর্তৃপক্ষ। আয়ের ওই টাকার একটি অংশ চুক্তি মোতাবেক বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বাকিটা দিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মচারীদের বেতন পরিশোধসহ নানা উন্নয়ন কাজে ব্যয় করতো।

এদিকে মোংলা বন্দরের শিল্প এলাকায় গড়ে ওঠা সিমেন্ট, এলপিজিসহ বিভিন্ন ধরণের ২০ ফ্যাক্টরি এবং বন্দরের ও ইপিজেরে পণ্য পরিবহণে নিয়োজিত প্রায় ৭০০ ট্রাক আসা-যাওয়াসহ বন্দরের শিল্প এলাকায় অবস্থান করে। বন্দরের নিজস্ব এ সড়কের যানজট কমাতে এবং রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পৌরসভা যৌথভাবে এ ট্রাক টার্মিনালটি নির্মাণ করে। অথচ গত ৮ জুন টার্মিনালটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও পরিবহণ মালিক সমিতির দাবীর পরিপ্রেক্ষতি যাতে মহাসড়কের কোথাও কোন টোল আদায় না হয় সেজন্য টার্মিনালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা যদি হাইওয়ের বাইরে এবং বন্দরের নিজস্ব জায়গায় হয়ে থাকে, তাহলে তারা কাগজপত্র দেখালে একটা সুরহা করা যেতে পারে।

মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র মো. জুলফিকার আলী। জানতে চাইলে প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে প্রজেক্টের মাধ্যমে টার্মিনালটি করা হয়েছে। এটি বন্ধ করে হওয়ায় কিস্তি দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এছাড়া এটি হাইওয়য়ের আওতাভুক্ত নয়, বন্দরের নিজস্ব জায়গায় এবং রাস্তাটি বন্দরের নিজস্ব। ভুল বুঝার কারণেই পৌর টার্মিনালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, টার্মিনাল বন্ধ করে দেওয়ায় পৌরসভা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। কারণ টার্মিনালের আয় দিয়ে পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন ও বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ করা হতো। দ্রুত এটি চালু না হলে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহানের কাছে। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, টার্মিনাল ও বন্দরের শিল্প এলাকার এ রাস্তা বন্দরের নিজস্ব জায়গার উপর, এটি হাইওয়ের আওতাভুক্ত নয়। মূলত ভুল বুঝাবুঝিতে পৌর ট্রাক টার্মিনালটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এনিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছে আমরাও চেষ্টা করছি আশা করা যায় স্বল্প সময়ের মধ্যে এটির সুরহা হয়ে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close