লুৎফুল আলম সজল, নড়াইল

  ০৫ জুন, ২০২০

নড়াইলে পাঁচ মাসে ৬ খুন আধিপত্য বিস্তারের জের

* ২ অস্বাভাবিক মৃত্যু অর্ধশতাধিক আহত * দেড় শতাধিক বাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট

নড়াইলে আধিপত্য বিস্তার ও আন্তদলীয় কোন্দলে ঘটছে হতাহতের ঘটনা। গত ৫ মাসে এখানে ৬ জন খুন এবং ২ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। করোনা সংকটকালেও সংঘর্ষ থেমে নেই। এসব সংঘর্ষে আহত হয়েছে অর্ধ শতাধিক এবং প্রায় ৭৫টি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ২৬ মে রাতে নড়াগাতি থানার কলাবাড়িয়া ইউপি আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দের ফলে একজন খুন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নড়াগাতি থানা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সালাউদ্দিন বসির বলেন, আধিপত্য ও দলীয় কোন্দলের জেরে এসব ঘটেছে। জেলা পুলিশ সুপার বলছেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সদিচ্ছায় এসব দ্বন্দ্বের নিরসন করা সম্ভব।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ মে আ.লীগ নেতা কলাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহামুদুল হাসান কায়েস, সবুর ফকির গ্রুপের সঙ্গে ওই ইউনিয়ন আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও ৩নং ওয়ার্ড মেম্বর কাইউম শিকদার গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের ধরে খুন হন কাইউম শিকদার। এ ঘটনায় নড়াগাতি থানা কৃষকলীগের সভাপতি আবুল হাসনাত মোল্যা, সজিব মল্লিক, মতিয়ার মল্লিক ও জামাল গুরুতর আহত হয়। এর আগে ২৩ মে কয়েস গ্রুপের হামলায় মহিলাসহ ১০ আহত ও ১৫টি বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। আবার হত্যাকা-ের পর প্রতিপক্ষের ৪টি বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ও ১২টি পাকা ভবনসহ অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়ি ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। বর্তমানে ওই গ্রাম বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে। এদিকে ১২ মে রাতে লোহাগড়ার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের ছায়মনারচর গ্রামের রহিমা বেগম (৫৫) নিজ বাড়িতে খুন হয়। এলাকাবাসি জানায়, ১১ মে রাতে বুলবুল মাস্টার গ্রুপের লোকজন এক প্রতিপক্ষের বাড়ি ভাংচুর করলে পরদিন গভীর রাতে মুসা মেম্বরের লোকজন বুলবুল মাস্টারের পক্ষের আলী আকবরের বাড়িতে চড়াও হয়ে তাকে আহত এবং তার স্ত্রী রহিমা বেগমকে কুপিয়ে হত্যা করে।

এর আগে ১০ মে পুলিশ কালিয়া উপজেলার আমতলা গ্রামে ছিদ্দিক শরীফের বাড়ির গেটের সামনে থেকে তার জামাই পার্শ্ববর্তী ফুলদাহ গ্রামের ইবাদত শেখের (৩৫) লাশ উদ্ধার করে। নিহতের স্ত্রীর অভিযোগ, স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। একই ভাবে ৬ মে পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের বল্লাহাটি গ্রামের ওসমান খানের ছেলে আলী খানকে (৪০) কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। অভিযোগ, আজিজুল ঠাকুরের লোকজন আধিপত্য বিস্তার ও খাস জমি দখল কেন্দ্র করে আলীকে হত্যা করে। এ সময় দুইজন গুরুতর জখম হয়।

মার্চের ১৩ তারিখে বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের কামাল প্রতাপ গ্রামে বাবুল শেখ, সাইফুল মোল্যা গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ জমাদ্দার, রাজ্জাক মল্লিক গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাফি মোল্লা (৩৫) খুন হয়। এ সময় ৬টি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আবার এর জেরে ৬ মে রাতে সাফি হত্যা মামলার ৪ আসামির বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এ সময় টহল পুলিশ এক ব্যক্তিকে আটক করলে সশ্রস্ত্র ৩০-৩৫ ব্যক্তি হামলা চালিয়ে পিকআপ ভ্যান ভাংচুর ও ২ কনস্টেবলকে আহত করে। মার্চের ৩ তারিখে সদরের সীতারামপুর ব্রীজ এলাকা থেকে চল্লিশোর্ধ অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের মাথায় আঘাতের চিহ্ন।

২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে লোহাগড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা বদর খন্দকার (৪৫) চরকালনা এলাকায় খুন হয়। এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় ব্যবসা ও রাজনৈতিক কারণে এ হত্যা হতে পারে। একই দিনে শহরের দূর্গাপুর এলাকার আশা খাতুনকে (২০) স্বামী রফিকুল ইসলাম শারীরিক অত্যাচারের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে। সাংবাদিকদের কাছে এ কথা স্বীকার করেন রফিকুলের পিতা গাফফার মোল্যা। এর ঠিক একদিন আগে, ২৩ মে চাঁদা না দেওয়ায় দীঘলিয়া ইউনিয়নের চর মাউলি গ্রামের কৃষক ইকবাল শেখকে মারধর ও গর্ভবতী গরু ধরে নিয়ে জবাই করে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা।

এর আগে, ৮ মে কাশিপুর ইউনিয়নের গ-ব-চালিঘাট গ্রামে মিরাজ মোল্লা ও শরিফুল ইসলাম গ্রুপের সঙ্গে সুলতান মাহমুদ বিপ্লব ও ছলেমান শেখ গ্রুপের সংঘর্ষে ২০ জন আহত ও ১০টি বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একইভাবে ১৫ এপ্রিল শাহাবাদ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর ধোন্ধা গ্রামের জিয়া মোল্যার সঙ্গে একই গ্রামের বর্তমান মেম্বর মনির সিকদারের এলাকার আধিপত্য বিস্তারের জেরে মোল্যার গ্রুপের ৩ জনকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ।নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম। সংঘর্ষ ও হত্যাকা- প্রসঙ্গে প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, নড়াইলে গ্রাম্য দ্বন্দ্ব (ক্যাইজা) একটি পুরোনো সমস্যা। আমি নড়াইলে যোগদানের পর এসব দ্বন্দ্ব অনেক কমেছে। এসব দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ আধিপত্য বিস্তার এবং রাজনৈতিক। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সদিচ্ছায় এসব দ্বন্দ্বের নিরসন করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close