বেড়া (পাবনা) ও উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ০১ জুন, ২০২০

বেড়ায় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ৩০০ বিঘা জমির ফসল

আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত উজান চরের প্রায় সোয়া ২০০ বিঘা জমির ধান-সবজি

পাবনার বেড়া উপজেলার যমুনার তীরবর্তি একটি জোলার (নালা) বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে সাত গ্রামের প্রায় ৩০০ বিঘার জমির বোরো ধান। গত শনিবার দুপুরে হঠাৎ করে উপজেলার রূপপুর ইউনিয়নে ঘোপশিলেন্দা গ্রামের জোলার মুখের বাঁধটি ভেঙ্গে যায়। মুহূর্তের মধ্যে পানি ঢুকে জমিগুলোর ধান, পাট, তিল তলিয়ে যায়। ফলে ডুবে যাওয়া পাকা-আধাপাকা ধান নিয়ে দিশেহারা কৃষকেরা। এদিকে শ্রমিকের অভাবে ধান কাটাতে পারছে না অনেকে।

এ আগে বিষয়টি নিয়ে গতকাল ‘বেড়ায় যমুনার ভাঙন হুমকিতে জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ’ শিরোনামে প্রতিদিনের সংবাদ সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

জানা যায়, গত কয়েক দিন যমুনায় অস্বাভিক পানি বৃদ্ধির ফলে ঘোপশিলেন্দা গ্রামের ১২০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে গ্রামবাসী পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানান। কিন্তু পাউবো এদিকে দৃষ্টি না দিলে এলাকাবাসি মিলে যমুনা নদীর তীরবর্তি ঘোপশিলেন্দায় একটি জোলার মুখের বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে রাখে। যাতে জোলা দিয়ে পানি ঢুকে মাঠের ধান, তিল, পাটসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে না যায়।

শনিবার বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনা নদীতে অস্বাভিক পানি বৃদ্বির ফলে ঘোপশিলেন্দা গ্রামের একটি জোলার মুখের বাঁধ ভেঙ্গে প্রবল বেগে পানি ঢুকে প্রতাপপুর, রানীগ্রাম, রঘুনাথপুর, রাজ্জাকপুর, কৃষ্ণপুর, ঘোপশিলেন্দা খানপুরা নতুনপাড়াসহ সাতটি গ্রামের প্রায় ৩০০ বিঘার জমির ধান, পাট তিল পানিতে তলিয়ে গেছে।

প্রতাপপুর গ্রামের কৃষক আতোয়ার আলী শেখ (৬৫) জানান, তিনি এ মাঠে ছয় বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিল। শনিবার জোলার মুখের বাঁধ ভেঙ্গে তার সমস্ত জমির ধান তলিয়ে গেছে। শ্রমিকের অভাবে ধানগুলো কেটে বাড়িতে আনতে পারলাম না। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।

রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, এ মাঠে আমার প্রজেক্টে নিজের ৫ বিঘাসহ ১৮ বিঘা জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেল চোখের পলকে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে ধানগুলো কাটতে পারলাম না। এবছর ছেলে সন্তান নিয়ে কষ্টে দিনাপাত করতে হবে। একই কথা বলেন কৃষক রফিকুল ইসলাম, আজিজুল হক, জয়াদ আলী, মানিক মিয়াসহ অনেকেই।

ঘোপশিলেন্দা গ্রামের (চার নম্বর ওয়ার্ড) স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিরুল ইসলাম বলেন, যমুনায়ত অস্বাভিক পানি বৃদ্বির ফলে শনিবার দুপরে হঠাৎ করে জোলার মুখের বাঁধটি ভেঙ্গে আট-দশটি গ্রামের কৃষকের অনেক বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে নষ্ঠ হয়েছে। অনেকেই আগেই ধান কেটে নিয়েছিল। তিনি বলেন, একদিকে নদী ভাঙ্গন অন্য দিকে পানিতে তলিয়ে ফসল নষ্ট হওয়ায় অনেকে নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

গতকাল রোববার সকালে ডুবে যাওয়া এলাকার পরিদর্শন করেছেন বেড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মসকর আলী। তিনি জানান, ক্ষতির পরিমান ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা করা হচ্ছে। পরবর্তিতে সরকারি কোন সহযোগিতা এলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকে দেওয়া হবে।

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান,

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় আকস্মিক বন্যায় উজান চরের প্রায় সোয়া দুইশ বিঘা জমির ইরি-বোরো ধান প্লাবিত হয়েছে। কৃষকেরা তাদের জমির আধাপাকা ধান কাটছে। একেবারে নিচু এলাকার অনেক জমির ধান পুরোপুরী পানিতে তলিয়ে গেছে।

গতকাল রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা ও জানা যায়, উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের উজান চর আবাদী মাঠে এবারের মৌসুমে ২৫টির বেশি সেচ মেশিনে বিপুল পরিমান জমিতে ইরি-বোরো ধান ফসলের আবাদ করেছেন কৃষকেরা। ধান পুরোপুরি পাকেনি। কিন্তু তিন-চার দিন আগে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি ঢুকছে। সেখানে পানি বাড়ছে। চরের একেবারে নিচু জমি গুলো ধান পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। অনেক জমির ধানের ছড়া জেগে আছে।

উজান চরে আবাদ করেছেন এমন কয়েকজন কৃষক সাইফুল ইসলাম, গোলজার হোসেন, মুনছুর শেখ, আব্দুল খালেক, শামীমা হক। তারা সহ একাধিক কৃষক জানান, অসময়ে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি ঢুকে তাদের ক্ষতির মুখে ফেলেছে। ফুলজোর নদী হয়ে এ পানি ঢুকেছে। পানি আরো ঢুকছে।

উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আজমল হক জানান, সেখানে আকস্মিক বন্যার পানি ঢুকে প্রায় সোয়া দুইশ বিঘা জমির ধান ফসল নিমজ্জিত এবং প্রায় ৭০ বিঘা জমির বিভিন্ন সবজি ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close