নওগাঁ প্রতিনিধি

  ০৭ এপ্রিল, ২০২০

রানীনগরে পোলট্রি মুরগি নিয়ে বিপাকে খামারিরা

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারা দেশের মতো নওগাঁর রানীনগরেও বন্ধ রয়েছে সব হাট-বাজার, দোকান-পাট ও যান চলাচল। এমতাবস্থায় উপজেলার শতাধিক খামারি তাদের খামারে উৎপাদিত পোলট্রি মুরগি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। অর্ধেক দামেও বিক্রি হচ্ছে না এসব পোলট্রি মুরগি। এতে করে পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে শুরু করেছেন খামারিরা।

জানা গেছে, প্রাণিজ ও আমিষের সিংহভাগই আসে পোলট্রি মুরগি থেকে। একসময় এই শিল্পটি অত্যন্ত লাভজনক হলেও বর্তমানে পোলট্রি মুরগির খাবারের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ ও ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি করায় লাভের পরিমাণটা কমে গেছে অনেকটাই। তবুও বেকারত্বকে জয় করার লক্ষ্যে কিছু শিক্ষিত বেকার যুবক, গৃহিণী ও কিছু মানুষ এই শিল্পটিকে লাভের আশায় ধরে রেখেছেন। কিন্তু সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মরণব্যাধি করোনার সংক্রমণের কারণে সরকার অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ায় খামারে উৎপাদিত পোলট্রি মুরগিগুলো এখন খামারিদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। রানীনগরে উৎপাদিত পোলট্রি মুরগি প্রধানত ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চালান হতো। কিন্তু যান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে এই মুরগিগুলো বাজারজাত করা যাচ্ছে না। যে মুরগি পূর্বে ১১৫-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে ৬০-৭০ টাকা কেজিতেও কেউ কিনছেন না। যার কারণে বাধ্য হয়েই খামারিদের মুরগি খামারে রাখতে হচ্ছে। এতে করে খাবার ও ওষুধ বেশি লাগছে।

রানীনগরের খট্টেশ্বর গ্রামের খামারি বাপ্পী বলেন, ‘আমি বেকারত্ব দূর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে একটি খামার করেছি। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে আমি মুরগি বিক্রি করতে পারছি না। এতে আমার খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে এবং বেশিদিন মুরগি খামারে থাকার কারণে মরেও যাচ্ছে। আমি এখন চরম বিপাকে পড়েছি। এভাবে আর কিছু দিন চলতে থাকলে আমাকে পথে বসতে হবে।’

চনমনু গ্রামের খামারি নুরজাহান বেগম বলেন, এমনিতে এই শিল্পটি লোকসানে পরিণত হয়েছে, তার ওপর আবার করোনাভাইরাসের কারণে মুরগি বিক্রি করতে পারছি না। আর মুরগি বিক্রি না হওয়ায় আমি খাবারও কিনতে পারছি না, বাচ্চাও কিনতে পারছি না। বর্তমানে চতুরমুখী সমস্যায় পড়েছি। তাই খামারিদের ওপর সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। তা না হলে এই শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশের লাখ লাখ খামারি নিঃস্ব হয়ে পথে বসবে।

দড়িয়াপুর গ্রামের খামারি মতিউর রহমান ও উজ্জ্বল হোসেন বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পটির প্রতি সরকারের কোনো সুদৃষ্টি নেই। তা না হলে এই শিল্পের প্রধান উপকরণ খাদ্য, ওষুধসহ অন্যান্য জিনিসের দাম হুহু করে বৃদ্ধি পায় কেমন করে। যার কারণে এই শিল্পটি লাভের স্থানে লোকসানে পরিণত হয়েছে। তাই এই সংকটময় সময়ে দেশের লাখ লাখ খামারিকে বাঁচানোর জন্য সরকারের উচিত খামারিদের সঠিক তালিকা করে সরকারি ভর্তুকি প্রদান করা।

আফতাব ফিড কোম্পানির ডিলার কে এইচ এম নয়ন খাঁন লুলু বলেন, পোলট্রি শিল্পটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। প্রান্তিক খামারিরা আস্তে আস্তে এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ দিন দিন ওষুধ, বাচ্চা ও খাবারের দাম যে পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে লাভের কোনো আশা নেই। বড় বড় কোম্পনিকে সরকার ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারি ও ডিলারদের জন্য সরকারের কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। যদি সরকার স্বল্প সুদে ঋণ দিত তাহলে খামারিরা কিছুটা হলেও লাভবান হতো। এই শিল্পটিকে বেঁচে রাখতে চেষ্টা করত।

নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. হেলাল হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে লোকসানে পড়া খামারিদের ভর্তুকি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে জানান তিনি।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম বলেন, পোলট্রি শিল্পটি একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক ও সাধারণ মানুষ পোলট্রি মুরগির খামার করে বেকারত্বকে জয় করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বর্তমানে এই শিল্পটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আমি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত আমার নির্বাচনী এলাকার খামারিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য চেষ্টা করব। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণসহ আগামীতে জাতীয় সংসদে খামারিদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরবেন বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close