আবদুল্লাহ আল মামুন, মাদারীপুর

  ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

মাদারীপুরের শিবচরে যুবলীগ নেতা হত্যাকাণ্ড

হত্যা মামলার আসামি প্রকাশ্যে বাদীপক্ষকে হুমকির অভিযোগ

মাদারীপুর পুলিশের খাতায় হত্যা মামলার আসামি খায়রুল আমিন। জেলার শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক দুর্জয় মাহমুদ বাচ্চু মৃধা হত্যাকাণ্ড মামলার দুই নম্বর আসামি তিনি। অথচ গত সোমবারই ছাত্রলীগের একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে দেখা গেছে। সেই অনুষ্ঠানের ছবি এখন স্থানীদের ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

হত্যা মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ করেছে মামলার বাদী। এমনকি আসামি গ্রেফতার না হওয়া তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-দামকি দেওয়া হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা। অন্যদিকে চার্জসিট দেওয়া নিয়ে শিবচর থানার এক একজন বলছেন এক এক কথা। এদিকে হত্যার ঘটনায় বাদী ও বিবাদী দুই পক্ষেরই মামলা রয়েছে।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর বিকালে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সালিশ মীমাংসা ডাকা হয়। এসময় প্রতিপক্ষ কহিনুর রহমান মাস্টারের লোকজনের হামলায় গুরুতর আহত হন ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা বাচ্চু। এ ঘটনায় ১৭ সেপ্টেম্ব মাদারিপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেড কোর্টে অভিযোগ দেন বড়ভাই বাবলু মৃধা, ২৭ সেপ্টেম্বর মামলাটি শিবচর থানায় নথিভূক্ত হয়। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। ওই রাতেই শিবচর থানায় আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন বাবলু মৃধা। এই মামলার দ্বিতীয় আসামি খায়রুল আমিন। তিনি উপজেলা যুবলীগের গ্রন্থ ও পাঠ্যপুুস্তুক বিষয় সম্পাদক। জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।

নিহতের বড়ভাই বাবলু মৃধা তিনি বলেন, ‘কহিনুর মাস্টার ও তার লোকজন মারধরে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। মামলার পরও আসামীরা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। সোমবারও ছাত্রলীগের একটি অনুষ্ঠানে নেতাদের সঙ্গে সে ছিল। কিন্তু এজাহারভুক্ত আসামীদের দেখেও গ্রেফতার করছে না পুলিশ। বিষয়টি প্রশাসনকে জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।’ তিনি বলেন, ‘এখন বিভিন্ন মানুষে মাধ্যমে বলছে, চার্জসীট থেকে নাম বাদ হয়ে যাচ্ছে, এরপর ওদেরকে (বাদিকে) দেখে নেব। এছাড়া বিভিন্নভাবে হুমকি-দামকি দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘ওসি বলছেন চার্জসিট দেওয়া হয়ে গেছে; কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, এখনো দেওয়া হয়নি। আর চার্জসীট দিলে আমাকে কেন জানানো হলো না?’

শিবচর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হাওলাদার। অনুষ্ঠানে ছবি তিনিই ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছেন। জানতে চাইলে ছবি দেওয়া কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ওইখানে আমাদের দলের বিভিন্ন নেতাকর্মী ছিল, আমিও ছিলাম।’ তিনি আসামির পক্ষে বলেন, ‘খাইরুলকে যে মামলার আসামী করা হয়েছে সেটা ষড়যন্তমূলকভাবে করা হয়েছে। আমার জানা মতে, এই মামলার চার্জসিট থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সে তো এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।’ তবে অপরাধীর শাস্তি দাবি করেন তিনি।

বাচ্চু হত্যা মামলার কোন তদন্ত রিপোর্ট এখনো দেয়া হয়নি বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন। তিনি জানান, ‘আমরা একজন আসামী গ্রেফতার করেছি, বাকিদের এখনো গ্রেফতার করতে পারিনি। বাকি আসামীরা যে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরকম তথ্য আমাদের কাছে নেই, কেউ জানায়নি।’

বাচ্চু হত্যার ঘটনায় বাদী ও বিবাদী দুই পক্ষেরই মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে শিবচর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ। প্রকাশ্যে অভিযুক্ত ঘুরে বেড়ান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি কি সব আসামীকে চিনি? আমাকে বা মামলার যে তদন্ত কর্মকর্তা তাকে বিষয়টি জানালে আমরা আইনগত ব্যবস্থা অবশ্যই নেব।’ মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই মামলায় চার্জশিট হয়েছে। আমাদের কাছে ওয়ারেন্টের চিঠি আসলে আমরা গ্রেফতারের ব্যবস্থা নেব। বাকি বিচার আদালত করবেন।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) মো. আবির হোসেন জানান, ‘দুই জনের কথাই ঠিক আছে, এখনো চার্জসীট বের না হলেও রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সবকিছু তৈরি হয়ে গেছে। এই মাসের মধ্যে চার্জসিট চলে আসবে।’ প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে আসামীর ছবি ভাইরাল বিষয় তিনি বলেন, ‘একটি মামলার আসামী ২৪ জন, সেখানে সবাই কিন্তু অপরাধী না। আমরা চাই কোন নিরাপরাদ মানুষ যেন হয়রানীর স্বাীকার না হয়।’ জানতে চাইলে মামলার অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা খায়রুল আমিনের যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close