প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

সড়কে চলছে অবৈধ ট্রাক্টর ধুলায় অতিষ্ঠ, দুর্ঘটনার শঙ্কা

কয়রায় প্রায় ১৫০ ট্রাক্টরে মাটি বহন মাধবপুরে ট্রাক্টর চালায় শিশুরা

খুলনার কয়রা ও হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় ট্রাক্টরের উৎপাতে অতিষ্ঠ জনসাধারণ। পাশাপাশি অবৈধ এ যানের চলাচলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও। অধিক লাভের আশায় কৃষিকাজের ব্যবহার উপযোগি করে তৈরি এই যন্ত্রটি পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার করেছে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনাও। খুলনার কয়রা থেকে মুজিবর রহমান ও হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে হামিদুর রহমানের পাঠানো খবর :

কয়রা (খুলনা) : খুলনার কয়রা উপজেলা জুড়ে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে এ অবৈধ যান। টলি নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত এই যন্ত্র মূলত চাষাবাদের কাজে ব্যবহার উপযোগি করে তৈরি। এক শ্রেণির মুনাফালোভী লোক অতিরিক্ত চাকা সংযোজন করে মিনি ট্রাকের মতো ব্যবহার করছেন ওই যানটি। কয়রা উপজেলায় অন্তত্ব ১০০ থেকে ১৫০টি এমন যান রয়েছে। এটির চালকের কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। তাছাড়া গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি করছে এ যানটি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) কয়রা অফিসের একজন উপসহকারি প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘পাকা রাস্তার বেহাল দশা করেছে এই দৈত্যাকৃতির যান ট্রলি। সড়কে ট্রলির চলাচল নিষিদ্ধ না করলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিধ্বস্থ হয়ে পড়বে।’

কয়রা থানার ওসি রবিউল হোসেন বলেন, রাস্তায় অবৈধভাবে ট্রলি চলাচল বন্ধের বিষয়টি আইনশৃংখলা কমিটির সভায় আলোচনা করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। জানতে চাইলে ইউএনও শিমুল কুমার সাহা বলেন, সড়কে অবৈধভাবে ট্রলি চলাচল করলে তা আটক করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) : হবিগঞ্জের মাধবপুরে চাষাবাদের জন্য কেনা ট্রাক্টর দিয়ে বানানো হয়েছে ট্রাক বা ট্রলি। এসব ট্রাক্টর ইট ও মাটি টানার কাজে চালাচ্ছে শিশু-কিশোররা। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের।

জানা গেছে, কৃষি কাজের জন্য এসব ট্রাক্টর ক্রয় করা হলেও মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছে ইট, বালু, মাটিসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহনের কাজে। ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে এসব ট্রাক্টর দিয়ে। ট্রাক্টরের বেপরোয়া আওয়াজ ও চলাচলে গ্রাম ও শহরের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। রোড পারমিশনবিহীন ট্রাক্টর ও লাইসেন্স-সনদবিহীন চালকদের কারণে রাস্তা-ঘাটে চলাচলকারি মানুষ সার্বক্ষণিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে চলাচল করছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন না হওয়ায় ১৫-২০ বছরের শিশু-কিশোররাও এসব ট্রাক্টর অবাধে চালানোর সুযোগ পাচ্ছে। বেপরোয়া গতি ও কানফাটা শব্দে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনাও। গত ২৮ ডিসেম্বর মাধবপুর-হরষপুর সড়কের সেউলিয়া ব্রিজ এলাকায় ট্রাক্টরের ধাক্কায় সিএনজি উল্টে পুকুরে পরে সিএনজির চালক ঘটনাস্থলে মারা যান। এ সময় আহত হন দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের মাধবপুর উপজেলা প্রতিনিধি। তবে অবৈধ এ যানের বিরুদ্ধে প্রমাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিন মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, এসব ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ধুলাবালির কারণে সড়কের দুই পাশের বাড়ি ও গাছপালা ধুলার আস্তরণে ঢেকে গেছে। কয়েক মিনিট পর পরই মাটি, বালি ও ইট ভর্তি একটি-দুটি করে ট্রলি বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে।

পথচারী আশরাফ আলী বলেন, মাধবপুর উপজেলার গড়ে উঠা বিভিন্ন ইটভাটার মালিক ও বালু ব্যবসায়ীরা এসব ট্রাক্টর ব্যবহার করে রাস্তা-ঘাট ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। যে কারণে ১০ মিনিটের রাস্তা পার হতে ৩০ থেকে ৫০ মিনিট লাগে। পাশাপাশি ধুলার কারণে ১০ গজ দূরের কোনো কিছু চোখে পড়ে না।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, এসব অবৈধ ট্রাক্টর রাস্তা-ঘাট ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করলেও এসব বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।

মাধবপুর উপজেলা কমিশনার (ভূমি) আয়েশা আক্তার বলেন, অবৈধ ট্রলির ব্যাপারে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close