আবদুর রউফ, ধামরাই (ঢাকা)

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

৩ ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় প্রভাবশালীদের দাপট

ঢাকার ধামরাইয়ে তিন ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করেছে এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা। এজন্য ফসলি ও নাল জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর-ডোবা তৈরি করছেন তারা। এমনকি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অন্যের ফসলি জমি ও রাস্তার নষ্ট করে মাটি ভর্তি গাড়ি যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এদিকে আইন উপেক্ষা করে জমির শ্রেণির পরিবর্তনের কারণে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। প্রতিদিন এখান থেকে শতাধিক ট্রাকে মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইট ভাটায়। এ অবস্থা বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নেই বলে দাবি করছেন এলাকাবাসি।

সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার কালামপুর থেকে বালিয়া হয়ে সাটুরিয়া পর্যন্ত রাস্তাটি পাকা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতর (এলজিইডি)। এই রাস্তাসহ মধুডাঙা গ্রামের উত্তরের এলাকার তিনফসলি জমি থেকে প্রায় ১ মাস যাবত মাটি কেটে ভাটাই বিক্রি করছেন সাইম ও রাজ্জাক। এদিকে রাস্তা দিয়ে এস্কেভেটর (মাটি কাটার মেশিন) নেওয়া-আনার ফলে রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে তৈরি হচ্ছে গর্ত। সেই রাস্তায় মাটিভর্তি ট্রাক-ট্রাকটর চলাচলের কারণে গর্ত বৃদ্ধি পেয়ে মানুষ যাতায়াতে দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে ধুরাবালিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়াসহ স্কুল পড়–য়া শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা নানা ধরণের অসুখে পড়েছেন। শ^াস কষ্ট, হাঁচি-কাশি ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিদিন এখান থেকে শতাধিক ট্রাকে মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইট ভাটায়। এতে রাস্তাসহ জমিতে গর্তকরে মাটি কাটা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি রক্ষাকরা মুসকিল হয়ে পড়বে। এছাড়া তিন ফসলি জমিতে পুকুরের মতো খনন করায় পাশের জমির মালিক বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করছেন।

সোলাইমান, সাইম, আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, আহম্মদ হোসেনসহ একাধিক প্রভাবশালী মাটির ব্যবসা করেন। এর মধ্যে মো. সাইম, সোলাইমান গাংগুটিয়া ইউনিয়নের জালসা গ্রামের বাসিন্দা; মো. আব্দুর রাজ্জাক, আহম্মদ হোসেন কুশুরা ইউনিয়নের মধুডাঙা গ্রামের বাসিন্দা এবং ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের আমতলি বাজার এলাকা বাসিন্দা নাছির। এরা নিজেদের আওয়ামীলীগের কর্মী বলে নিজেদের পরিচয় দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুতিপাড়া ইউনিয়নের বাথুলি এলাকার সোহেল মুন্সি, মামুন, ফারুক, সোহেল মিলে জালসা গ্রাম ও বাথুলি এলাকার দক্ষিণ পাশে মাটিকেটে ভাটায় বিক্রি করছেন। একইভাবে নবগ্রাম, বারপাইক্কা গ্রাম, সোয়াপুর, রোয়াইল, ভাড়াররিয়া এলাকার ৩ ফসলি জমির মাটি উজার হচ্ছে। এজন্য দ্রুত বদলে যাচ্ছে জমির শ্রেণি।

মাটি কাটায় যুক্ত আমতলি বাজার এলাকার নাছিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দেখছি আপনারা কি করতে পারবেন। যা পারেন তা করেন।’ অপর ব্যবসায়ি সাইম আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ‘দশ বছর যাবত আমি মাটির ব্যবসা করি। আমি সবাইকে ম্যানেজ করে চলি।’ তিনি দাপট দেখিয়ে বলেন, ‘আপনি থানার দারোগার কাছে ফোন দেন, তাদের আমি টাকা দেই। জমি থেকে মাটি কাটা শেষ হলে চলে যাব। আপনারা যা পারেন করেন।’ আ. রাজ্জাক নামে ব্যবসায়ি বলেন, ‘আমরা সাতজন মিলে এই মাটির ব্যবসা করি। আমরা কাওয়ালীপাড়া পুলিশকে টাকা দিয়ে মাটি কাটি, আমাদের বলে কোন লাভ নেই। আপনাদের মত কত লোক আসে যায়।’ জালসা গ্রামের সোলাইমান বলেন, ‘আমার মাটির লীগ, কত পুলিশ ঘুরাই। যান ভাই, অন্য এক সময় এসে দেখা করেন।’

জানতে চাইলে একাধিক জমির মালিক বলেন, ‘আমাদের কোন কথা তারা শুনে না, প্রভাব দেখায়, পুলিশকে ম্যানেজ করে উপজেলার সব জায়গায় মাটির ব্যবসা করছে। যার জন্য আমাদের কথা কেউ শুনে না।’

সহকারী কমিশনার (ভূমি) অন্তরা হালদার। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৩ ফসলী জমি থেকে মাটি কাটায় অন্যায়। যারা জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে এ কাজ করছেন, তাদের ভূমি আইনে শাস্তি হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব সামিউল হক। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, ‘সরকারি ভূমি আইন অনুযায়ি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ডিসি অথবা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অনুমতি লাগে। যারা ৩ ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close