দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

মেহেরপুর

তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননের হিড়িক

আসছে আবাদি জমি। বিশেষ করে তিন ফসলী জমিতেও পুকুর খননের হিড়িক পড়াতে ফসল উৎপাদনে বিরুপ প্রভাব পড়তে যাচ্ছে।

কৃষি ও সবজি চাষ নির্ভর একটি জেলা মেহেরপুরে উৎপাদিত ফসল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় খাদ্য ভা-ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। দীর্ঘদিন যাবৎ জেলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে এই সবজি চাষ। তবে মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় আগ্রহ বেড়েছে পুকুর খননে। ফলে জেলার প্রতিটি গ্রামেই পাল্লা দিয়ে চলছে আবাদি জমি, বসতবাড়ির পাশে পুকুর কাটা। পাঙ্গাস, মনোসেক্স ও রুই, কাতলা, সিলভার কার্প জাতীয় মাছ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন অনেক কৃষক। ফলে আবাদি জমিতে পুকুর খননের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা লঙ্ঘন করে অবাধে চলছে পুকুর খননের কাজ। বিশেষ করে এলাকায় যারা অনেক জমির মালিক কিংবা বিভিন্নভাবে প্রভাবশালী তারাই পুকুর খননের কাজ করছেন। যত্রতত্র পুকুর খননের কারণে কোন কোন এলাকায় জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি হচ্ছে।

গাংনী উপজেলার ষোলটাকা গ্রাম মাছ চাষের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পুকুর খননকরে এখন মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত। মাছ চাষের গ্রাম নামেই পরিচিত পেয়েছে। গ্রামটির আশেপাশের আবাদি জমি পুকুরে পরিণত করা হয়েছে। সরেজমিনে গ্রামটি ঘুরে দেখা গেছে আবাদি জমির ৬০ ভাগ এখন মাছ চাষের পুকুর।

ষোলটাকা গ্রামের কৃষক হাবেল আলী, নূর হোসেন, আব্দুল বারি জানান, ইচ্ছে মতো পুকুর খননের কারণে বর্ষাকালে গ্রামের মধ্যে হাঁটু পানি জমে থাকে। বিশেষ করে ষোলটাকা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গ্রামের দক্ষিণপাড়ার রাস্তা থাকে হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের ফলে পানি বের হবার পথ হারিয়ে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেবে জেলায় আবাদি জমির প্রায় সবই দুই ফসলি ও তিন ফসলি। ৭১৬.০৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ জেলার ৭০-৮০ ভাগ মানুষের আয়ের উৎস কৃষি। ‘স্বাধীনতার সূতিকাগার মুজিবনগর’ খ্যাত মেহেরপুর তিন উপজেলা, দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মেহেরপুর জেলা। মোটজমি ৬০ হাজার ১৮৩ হেক্টর ও নীট ফসলী জমি ৬০ হাজার ০২৪ হেক্টর। এক ফসলী জমি ৩ হাজা ১৫৩ হেক্টর, দুই ফসলী জমি ৩০ হাজার ৯১৩ হেক্টর, তিন ফসলী জমি ২৫ হাজার ৮৩৮ হেক্টর এবং তিনের অধিক ফসলি জমি ৩২০ হেক্টর। উর্বর ও সমতল এলাকা হওয়ায় সব ধরনের ফসল আবাদ হয়। স্কেভেটার মেশিন দিয়ে পুকুর খননের মচ্ছব চললেও যেন দেখার কেউ নেই। এমনটি অভিযোগ স্থানীয়দের।

সদর উপজেলার বাড়িবাকা গ্রামের মাঠে আসকার আলী নামের এক ব্যক্তি ধান আবাদের ২ বিঘা জমিতে পুকুর কাটছেন। পুকুর খনন করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। একইভাবে বাড়িবাকা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ির পাশের একটি উঁচু ভিটা কেটে গভীর গর্তের পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে বর্ষাকালে আশেপাশের জমি ও গাছপালা পুকুরে বিলিন হবে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারেও জানতে চাইলেও সদুত্তোর দিতে পারেননি আব্দুর রাজ্জাক।

অনুমতি ছাড়া তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননের বিষয়টি গোচরে আনলে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি বলেন, যারা পুকুর খনন করছেন তাদের কাউকেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। অভিযান পরিচালনা করে পুকুর খননকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

জেলা খামার বাড়ির উপপরিচালক ড. মো. আক্তারুজ্জামান। তিনি জানান, পুকুর খনন আর ইটভাটা আবাদি জমি খেয়ে ফেলছে। মানুষ সচেতন না হওয়ার কারণে প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে। এই জেলায় উৎপাদিত খাদ্য ও সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় খাদ্য ভা-ারে যথেষ্ট অবদান রাখছে। ভবিষ্যতে জেলার খাদ্য চাহিদা মেটানো দুঃসাধ্য হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close