মোহাইমিনুল হুমায়ুন, শেরপুর

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২০

শেরপুরের ব্র্যান্ড তুলসীমালা চালের চাহিদা সারা দেশে

জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে সম্প্রতি শেরপুরে নির্ধারণ হয়েছে ‘পর্যটনের আনন্দে, তুলসীমালার সুগন্ধে’। এরপর থেকেই বাড়ছে তুলসীমালা চালের চাহিদা। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এর চাহিদা তৈরি হয়েছে। এমনকি দেশের বাইরেও এই চালের বিস্তার লাভ করছে স্থানীয়দের।

বিভিন্ন জেলায় নানা প্রজাতির সুগন্ধি ধানের চাল উৎপাদিত হলেও শেরপুরের তুলসীমালার চালের খ্যাতি আছে। ইতোমধ্যে জেলা ওয়েবসাইট ‘আওয়ার শেরপুর’ ব্র্যান্ডিং হিসেবে তুলসীমালাকে ছড়িয়ে দিতে অনলাইন প্রচার চালিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সাধারণত তুলসীমালা চাল এখানে ৫০ কেজি বস্তা থেকে খুচরা বিক্রেতারা কেজি দরে বিক্রি করে থাকে। ‘আওয়ার শেরপুর’ দেশ-বিদেশে এর চাহিদা বাড়াতে ১ কেজি আকারের প্যাকেট জাত করে সুখ্যাতি করে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালিয়েছে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে এর চাহিদা। এ চাল দিয়ে রান্না করা বিভিন্ন ধরনের খাবারের ছবি ফেইসবুকে প্রচারের অংশ নিচ্ছেন স্থানীয়রা। এ সুগন্ধি ও সুস্বাধু চাল ভাত থেকে শুরু করে পোলাও, রিবিয়ানী, খিচুরি, ফিন্নি-পায়েসসহ বিভিন্ন মজাদার খাবার তৈরিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

সরকারের কৃষি বাতায়ন সূত্রে জানা যায়, স্থানীয়ভাবে প্রচলিত জাতের ধান তুলশীমালার জীবনকাল ১৩৫ থেকে ১৫০ দিন। বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ৩-৪টি চাষ দিয়ে মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হয়। জুন-জুলাই মাসে প্রতি শতক জমিতে ১ কেজি বীজ হারে বীজতলা প্রস্তুত করতে হয়। ৮০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটারের বেশি ধানগাছ বড় হয় না। আমন মৌসুমেও এটা চাষের উপযোগী।

তুলসীমালা নিয়ে ফেসবুকে প্রচার চালাচ্ছে উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) একটি গ্রুপ। তাদের নেওয়া জরিপে ফাতেমা-তুজ-জহুরা রজনী এক গৃহবধু জানান, ‘আওয়ার শেরপুরের’ থেকে পাওয়া তথ্যে তুলসীমালা চালের ভাত রান্না করেন। তিনি লেখেন, ‘জীবনের প্রথমবারের মতন বুঝলাম যে ভাতেরও স্বাদ হয়! এই তুলসীমালা খেতে এতই মিষ্টি যে আমার মনে হয়েছে এটা এমনিতেই খাওয়া যায়।’

ফারিয়া আবেদীন রাফার নামে এক নারী লেখা, ‘তুলসীমালা পুরাই বাজিমাত করে ফেলেছে। তুলসীমালা দিয়ে পায়েস অনেক মজা হয়েছে।’

জেলা ওয়েবসাইট ‘আওয়ার শেরপুর’ এর প্রতিষ্ঠাতা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, শেরপুর জেলাকে ফেসবুক আর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে আমি দুই বছর ধরে কষ্ট করে যাচ্ছি। এতদিনে এর সুফল দেখতে পাচ্ছি বলা যায়। তুলশীমালা শেরপুরের গর্ব এবং অনেকেই আমাকে বলেছে যে এই চাল খেতে সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর এবং খাবার পর আরাম লাগে শরীরে।

তিনি জানান, উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) দেশি পণ্য নিয়ে অনলাইনে প্রতিদিন কাজ করছে এবং এর সুফল আমি নিজেই পেয়েছি।

এদিকে জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ১৪ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে তুলসীমালা ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৮০০, নকলায় ২ হাজার ৫৯০, নালিতাবাড়িতে ৪ হাজার ৬০, ঝিনাইাগাতিতে ২ হাজার ১১০ এবং শ্রীবরর্দী উপজেলায় ৯৮০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এতে চাল হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার ৬৩৭ মেট্রিক টন।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) উপপরিচালক জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন বলেন, সম্প্রতি তুলসীমালাকে জেলা ব্র্যান্ডিং করে জেলা প্রশাসন থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর কারণে এর আবাদ এবং চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close