প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২০

ফসলি জমির মাটি ‘লুট’ ভাটার ভেতরেই স-মিল

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের জামপুর এলাকায় ফসলি জমির মাটি অনিচ্ছা সত্ত্বেও নাম মাত্র মূল্যে ইটভাটায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। জামপুর ইউনিয়নের কাহেনা মৌজার বেলাবো ও কাহেনা এলাকায় এই ঘটনা বেশি ঘটছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের নির্যাতনের ভয়ে মাটি বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় জামপুর ইউপি সদস্য বদরুজ্জামান বদু ও তার কয়েকজন সহযোগী এই ভাটায় সরবরাহ করেন। এজন্য উপজেলা প্রশাসনের নিরবতাকে দায়ি করছেন ভুক্তভোগিরা।

এদিকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার জনবসতী এলাকায় ইটভাটা স্থাপনসহ কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ফুকরা ইউনিয়নের তারাইল গ্রামের অবস্থিত ‘আরবিআই’ ভাটায় এই অনিয়ম চলছে।

এলাকবাসীর বরাদ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ প্রতিনিধি জানান, উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বদরুজ্জামান বদুর নেতৃত্বে তার সহযোগী পেরাব গ্রামের সালাউদ্দিন, সজিব মিয়া ও ফয়সালসহ ২০-২৫ জনের একটি প্রভাবশালী বাহিনী জামপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকার ফসলি জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নিয়ে পাশ^বর্তী রূপগঞ্জ উপজেলার মাসাবো, বরপা ও সিংলাবো এলাকার কয়েকটি ইটভাটায় বিক্রি করছে।

ভুক্তভোগিরা জানান, এর প্রতিবাদ করলে তারা বাড়ি-ঘরে সন্ত্রাসী হামলা চালানসহ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বেলাব, কাহেনা ও পেরাব এলাকার কৃষি জমি থেকে খনন যন্ত্রের সাহায্যে প্রায় ১০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিচ্ছে। একটি জমির মাটি কিনে প্রায় ১০ ফুট গভীর করে মাটি কাটায় পাশের জমিও খুব সহজেই ভেঙে যাচ্ছে। কোন রকম উপায় খুঁজে না পেয়ে বাধ্য হয়েই পাশের জমির মালিক তার জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে।

মাটি বিক্রিতে বাধ্য হওয়া কয়েকজন কৃষক জানান, ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দালাল হিসেবে নিয়োগ দেয় ভাটা মালিকরা। তাছাড়া এলাকার বখাটে ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত যুবকদের টাকার প্রলোভনে তাদের অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত করে। পরে তারা কৌশলে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করে।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বদরুজ্জামান বদু বলেন, আমি কৃষকদের জমির মাটি ন্যায্য মূল্য দিয়ে কিনে ইটভাটায় বিক্রি করছি। জোর করে কোন কৃষকের জমির মাটি কিনতে কাউকে বাধ্য করার অভিযোগ মিথ্যা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার জানান, কৃষি জমির টপসয়েল কেটে ইটভাটায় বিক্রি করার ফলে জমির উর্বরতা শক্তি হারিয়ে চাষাবাদের অযোগ্য হচ্ছে। এ কারণে ভবিষ্যতে হুমকির মুখে পড়বে সোনারগাঁয়ের কৃষি জমি ও কৃষিক পরিবারগুলো।

সোনারগাঁ ইউএনও রকিবুর রহমান খান বলেন, জামপুর এলাকার কৃষি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রির বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) : উপজেলার তিনটি ইটভাটার মধ্যে সর্বশেষ ২০১৬ সাল ঢাকা-গোপালগঞ্জ বিশ্বরোডের পূর্বপাশে ‘আরবিআই’ ইটভাটা চালু করেন তারাইল গ্রামের মো. আকুমোল্লার ছেলে মো. রিপন মোল্লা। সে সময় পরিবেশগত ছাড়পত্র ও উপজেলা নির্বাহীর অনুমতি নেননি তিনি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিপনের শ্বশুর সদর উপজেলার পুকুরিয়ায় ইটভাটার মালিক সিরাজ মিয়া তারাইল গ্রামে ভাটা প্রতিষ্ঠা করে জামাতা ওই ভাটা দেখা শোনার দায়িত্ব দেন। এ জন্য ভাটার নাম ‘আরবিআই’ হলেও ইটের গায়ে ‘এসবিআই’ খচিত হচ্ছে। ক্যাশ মেমোতে সিরাজ মোল্লার সত্ত্বাধীকারে মেসার্স রুহুল আমিন ব্রিকস লেখা রয়েছে। এদিকে সরকারি আদেশ অমান্য করে ইট তৈরি ভাটায় জ্বালানী হিসেবে কাঠ পোড়ান হচ্ছে। এ জন্য ভাটার ভেতরই একটি স-মিল বসিয়ে গাছ চিরাইয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া বিশ্বরোড থেকে তারাইল গ্রামের পূর্বপাড়ার জনবসতির জন্য সরকার নির্মিত রাস্তাটি ইটভাটায় মাটি এবং ইট আনা নেওয়ায় গর্তখন্দে পরিনত হয়েছে।

জানতে চাইলে ভাটার মালিক রিপন মোল্লা বলেন, আগে আমার কাগজপত্র সঠিক ছিল না, বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তর অফিসে আবেদনের মাধ্যমে কাগজপত্র জমা দিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আসাদুর রহমানের কাছে। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ‘ইট ভাটাটি ৩ বছর চালু হওয়ার তথ্য সঠিক নয়। অনুমতির জন্য আবেদন এবং ভাটার কাগজপত্র আমি ঢাকায় পাঠিয়েছি।’ তবে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই ভাটা চালু বিষয়ের বৈধতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইটভাটাটিকে সম্পূর্ণ অবৈদ্য বলা যাবে না।’

কাশিয়ানী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি ) মিন্টু বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘অবৈদ্য ইটভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কাশিয়ানীতে কোন অবৈধ ভাটা থাকবে না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close