চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২০

নিরাপদ সবজি আবাদে চাঁপাইয়ে নানা উদ্যোগ

সবজি উৎপাদন নিরাপদ করতে বিষমুক্ত রাখায় উদ্যোগ নিচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকরা। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া উদ্যোগের পরিপেক্ষিতে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। সদর উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বিক্রি করা হচ্ছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদন ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

নিরাপদ সবজি উৎপাদনের অংশ হিসেবে সদর উপজেলার পৌর এলাকার টিকরামপুর গ্রামের ৩০ কৃষক রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার করছেন জৈব কেঁচো কম্পোস্ট সার ও জৈব বালাইনাশক। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য পৌর এলাকার নতুনহাটে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপদ বিক্রয় কেন্দ্র।

খাদ্যনিরাপত্তার পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের গুরুত্ব এখন অনুভূত হচ্ছে সমানভাবেই। কৃষি খাতে প্রাযুক্তিক প্রগতির কল্যাণে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু এর পরও নিরাপদ খাদ্যের প্রাপ্যতাকে অনিশ্চিত করে তুলছে কীটনাশক ও রাসায়নিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার।

এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ফসল ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ক্ষতিকর বালাইনাশক ব্যবহারে মাটির ভেতরের ও উপরের কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছেÑ সে বিষয়ে কার্যকর কোনো গবেষণা নেই। জমির বালাইগুলোকে ধ্বংস না করে বরং প্রতিরোধের মানসিকতা গড়ে তোলা গেলে অ্যাগ্রো ইকোলজি ঠিক রাখা সম্ভব। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রাকৃতিক উপায়ই রয়েছে। বালাইনাশকের বিকল্প যেসব পথ ও উপায় রয়েছে, সেগুলো কৃষকের মধ্যে সম্প্রসারণ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আশরাফুল আরিফ জানান, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনই মুখ্য বিষয় নয়। উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষি পণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে মনোযোগ দিতে হবে উৎপাদিত নিরাপদ সবজি বিপণনের দিকেও। কৃষি পণ্য সংরক্ষণ ও বিপণন সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। এ জন্য জেলা পর্যায়ে কৃষিপণ্য সংরক্ষণে আধুনিক ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

তিনি আরো বলেন, কৃষিপণ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় প্রচুর পরিমাণ পচে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও সংরক্ষণজনিত সমস্যার কারণে উত্তোলন মৌসুমে কৃষক কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষকরা। এ কারণে দেশের কৃষি অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া কৃষকদের সংগঠিত করে চাষিদের সমবায় সমিতি গঠন করা যেতে পারে। এটি তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেতে সহায়তা করবে।

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার সলেহ আকরাম জানান, নিরাপদ সবজির চাহিদা বাড়ায় এর উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আমরা ভোক্তাদের মধ্যে নিরাপদ সবজির ভোগ আকাক্সক্ষা তৈরির পাশাপাশি তা দ্রুত সরবরাহ করতে কাজ করছি। ইতিমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নতুনহাটে নিরাপদ সবজি বাজার বসছে। এখানকার সব সবজি নিরাপদ। পরীক্ষার মাধ্যমে নিরাপদ ও পুষ্টিকর সবজি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এছাড়াও আগামী সপ্তাহে আরো ৭০ কৃষককে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনের চর্চাটি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মঞ্জুরুল হোদা বলেন, টিকরামপুর এলাকায় ৩০ সবজি উৎপাদনকারীকে জৈব বালাইনাশকভিত্তিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তারা বাধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, পটল, বেগুন ও মিষ্টিকুমড়াসহ অন্যান্য সবজি চাষ করা শুরু করেছে। এতোদিন তাদের উৎপাদিত সবজি বাইরে বিক্রি করে আসছিলেন। তবে কৃষি বিভাগের নির্দেশনায় নির্দিষ্ট স্থানে বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো ভোক্তা পর্যায়ে নিরাপদ সবজির সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষকদের বাণিজ্যিকভাবে লাভবান করা। নিরাপদ সবজি চাষে আগ্রহী কৃষকদের দেয়া হবে আলাদা প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক সহায়তাসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close