মজিবার রহমান, কয়রা (খুলনা)

  ২২ জানুয়ারি, ২০২০

সুন্দরবনে প্রতিকূল আবহাওয়া শুঁটকি আহরণে নেই সুখবর

সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাত ও প্রচ- শীতের সঙ্গে বৃষ্টির কারণে সাগরে কাঙ্খিত মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা। তাই শুঁটকির জন্য মাছ আহরণ মৌসুমে খুশির আমেজ নেই খুলনার কয়রা উপজেলার দুবলার চরসহ আশপাশের শুটকি পল্লীর চরে। এতে নির্ধারিত লক্ষমাত্রা রাজস্ব অর্জিত না হওয়ার আশংকা করছে বন বিভাগ।

বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের দুবলারচর এলাকা দেশের শুঁটকির জন্য প্রশিদ্ধ জায়গা। ভরা মৌসুমে কাংক্ষিত শুটকি আহরণ না হওয়ায় জেলে, বহরদর ও শুটকি ব্যবসায়ীদের মাঝে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। তবে আগামী দুইমাস আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করছে জেলেরা।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন উপকুল দুবলার চরে অক্টোবর থেকে মার্চ, এই ৫ মাসব্যাপী চলে শুটকি আহরণ মৌসুম। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধ করে পাশ-পারমিট নিতে ডিপো মালিক, বহরদারসহ কয়েক হাজার জেলে শুটকির জন্য সাগরে মাছ আহরণ করেন। এ বছর সুন্দরবনের ৫টি চরে ৫৩টি ডিপো মালিক, ১০৪০টি জেলে ঘরে প্রায় ২০ হাজার জেলে শুটকির জন্য মাছ আহরণ করছে। কিন্তু এবার গত বছরের ১০ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে শুটকি নষ্ট হওয়া এবং ডিসেম্বরের শেষের দিকে শৈত্য প্রবাহের কারণে প্রচ- ঠা-ার সঙ্গে বৃষ্টি শুটকি পল্লীতে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জেলেরা বলছেন, প্রতি বছরের মতো এবারও সমুদ্র থেকে লইট্যা, ছুড়ি, চ্যালা, ভেটকি, কোরাল, চিংড়ি, রূপচাঁদা, কঙ্কন, মেদসহ বিভিন্ন প্রকার মাছ সমুদ্র থেকে আহরণ করে মাচায় শুকিয়ে শুটকি তৈরি করছেন। তবে প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের কারণে জেলেরা যেমন লোকসানে পড়তে হচ্ছে অন্যদিকে সরকারও হারাচ্ছে কাংক্ষিত রাজস্ব।

দুবলার চরের বহরদর ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর থেকে সাগরে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া প্রচ- শীতের সঙ্গে সাগরে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে, এতে উৎপাদন এতো কম যে আমাদের পুঁজিই টিকবে না। আর সম্প্রতি কুয়াশার কারণে আরেক সমস্যায় পড়েছে মাছ আহরণ করা জেলেরা।

দুবলা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিষ কুমার রায় বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এ বছর জেলেরা একটু সমস্যায় রয়েছে। তবে তাদের ক্ষতি কাটিয়ে তুলতে তারা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে।

কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের জেলে এবাদুল হক বলেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মাছের উৎপাদন কম। যে মাছ পাচ্ছি তার আকার-আকৃতিও ছোট। তাই জেলেদের মনে কোন আনন্দ নেই। কারণ আপনজন ছেড়ে প্রায় ৬ মাসের জন্য সাগরে আসতে হয়। ৬ মাস কাজ করে যদি শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হলে এর থেকে কষ্টের কিছু নেই।

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ। এই ব্যবসায়ি নেতা বলেন, প্রতি বছর শুটকি মৌসুমে জেলেদের একটি লক্ষ্যমাত্রা থাকে। এ বছর জেলেদের লক্ষ্যমাত্রা কোনভাবেই পূরণ হবে না। তবে মৌসুমের বাকি দিনগুলোতে যদি আবহাওয়া ভাল থাকে এবং মাছ বেশি পাওয়া যায় তাহলে কিছু ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বুলবুল ও শীতের কারণে জেলেরা গেলবছরের থেকে মাছ কম পাচ্ছে। গেল বছর ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত যেখানে রাজস্বের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৪১ লাখ সেখানে এ বছর একই সময়ে সে রাজস্ব মাত্র ১ কোটি ৩ লাখ। গেল বছর পুরো মৌসুমে আমাদের রাজস্ব আদায় ছিল ২ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮১৯ টাকা। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ২ মাসে জেলেরা কিছু ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close