আরিফ খাঁন, বেড়া (পাবনা)

  ২০ জানুয়ারি, ২০২০

কাকেশ্বরী পুনঃখননের উদ্যোগ সরিয়ে নিচ্ছে অবৈধ স্থাপনা

সরকারি জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে অনেক সময় নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় প্রশাসনকে। অভিযানে গিয়ে দখলদারদের বাধার মুখে ফিরেও আসতে হয়। তবে এবার ব্যতিক্রম ঘটেছে পাবনা বেড়া-সাঁথিয়ার কাকেশ্বরী নদী খনন ও দখলমুক্ত কার্যক্রমে। বেড়া পাউবো গত ১০ জানুয়ারি নোটিস এবং মাইকিং করে জানিয়ে দেন ১৭ জানুয়ারির মধ্যে কাকেশ্বরী নদীর দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা নিজ নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেওয়ার কথা। অন্যথায় নির্ধারিত সময়ে সরিয়ে না নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে দখলদাররা নিজ নিজ দায়িত্বে নিজেরাই দোকান, বসত ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে জায়গা খালি করে দিচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনার মধ্যে রয়েছে পাকা ভবনসহ শত শত সেমিপাকা ঘর। উচ্ছেদ বার্তা দিয়ে ৭ দিন সময় বেঁধে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

বেড়া পাউবো সূত্রে জানা যায়, ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সাঁথিয়া উপজেলার ডি-৩ সুতিখালি ও ডি-২ কাকেশ্বরী নদীর পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন করা হয় ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে। কাকেশ্বরী নদীর খনন কাজ সাঁথিয়ার উপজেলার সাতআনি ব্রিজ থেকে বেড়া উপজেলার কৈটলা সুইজ গেট পর্যন্ত সাড়ে ১৯ কি.মি. নদী পুনঃখনন করা হবে। এই কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গতবছর বর্ষার আগ মুহুর্তে খনন কাজ কিছুটা করা হয়। পরবর্তি কাজ এবছর আবার শুরু করা হবে।

গতকাল সরেজমিনে বেড়া-সাঁথিয়ার দুই উপজেলার আফড়া শামুকজানী, পুন্ডুরিয়া, চাকলা, পাঁচুরিয়া, কৈটলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায় কাকেশ্বরী নদীর দুই পাড় দখল করে কালে কালে গড়ে উঠেছিল হাজার খানেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়ি। উচ্ছেদের কথা জানতে পেরে অসহায় ভূমিহীন দরিদ্র মানুষেরা তাদের বসত ঘড় ভেঙে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। এ সকল বাড়িতে থাকা বিভিন্ন ধরনের গাছ বিক্রি করে দিচ্ছেন পানির দরে। নদীর দুই পাড়ের বসতিদের বেশির ভাগ মানুষের নিজস্ব কোন জায়গা জমি নেই।

আফড়া গ্রামের শাজাহান আলী জানান, আমরা জানি আমাদের ঘর ভাংগা থেকে রক্ষা পাবে না। তাই নিজেদের ঘড় নিজেরা আগেই ভেঙে নিয়ে যাচ্ছি। নিজেরা ঘড় খুলে নিলে আবার ব্যবহার করতে পারবো ড্রেজার লাগালে তো ঘরের কিছু থাকে না। পুন্ডুরিয়া গ্রামের শ্রী নিমাই চন্দ্র কর্মকার নদীর পাড়ে একতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করে দীর্ঘদিন বসতি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার নিজের ব্যাক্তিগত জায়গায় বসবাস করছি। এটা আমার কেনা জায়গা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, আমাদের দাদার আমল থেকে আমরা এই বাড়িতে বসত করে আসছি আমরা কিভাবে বুঝতে পারবো কতটুকু পানি উন্নয়নের জায়গা কতটুকু আমাদের জায়গা। পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের জায়গা বুঝে নিয়ে আমাদের সিমানা নির্ধারণ করে দিলে ভাল হয়।

বেড়া পাউবো নির্বাহী প্রকৌশরী মো. আব্দুল হামিদ বলেন, দেশের ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ডি-২ কাকেশ্বরী নদীর পুনঃখনন করে নদীর দুই পাড় দিয়ে মাটি ফেলে রাস্তা বেধে দেওয়া হবে। আর এই রাস্তা নির্মিতে এই অবৈধ্য স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য মাইকিং এবং নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অনেকেই তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছে আর যারা সরায়নি তাদের স্থাপনাগুলো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দ্রুতই উচ্ছেদ করা হবে। ইতিপূর্বেই নদীর সিমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close