অলিউজ্জামান রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

  ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব

‘আইনগতভাবে জমির টপ সয়েল কাটার সুযোগ নেই। এ ধরনের লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ভবানিপুর মৌজার ফসলি জমির মাটি নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। কৃষকদের অভাবের সুযোগে এসব মাটি কিনে নিয়ে ইট তৈরির কাজে লাগানো হচ্ছে। এতে দিনদিন ওই এলাকার ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আইন অমান্য করে ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ায় এ অঞ্চলের উৎপাদন কমার পাশাপাশি বহু কৃষক বেকার হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া মাটি কাটায় পরিবেশও পড়েছে হুমকির মুখে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইসলামপুর ইউনিয়নের ভবানিপুর মৌজার শেষপ্রান্ত সুন্দরপুর ইউনিয়নের মরাপাগলা গ্রামের মধ্যবর্তী এলাকার প্রায় ৩০ বিঘা ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হয়েছে। এখনোও চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। কয়েক বছর ধরে সেলিম নামের এক ব্যাক্তি কৃষকদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও লোভ দেখিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে। মাটি কাটার মেশিন (ভেকু) বসিয়ে ১০ থেকে ১২ ফিট গভীর থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে পার্শ্ববর্তী জমিও ভেঙে পড়ছে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা নামমাত্র মূল্যে ওই সেলিমের কাছে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন। এছাড়া মাটি ইটভাটায় নেওয়ার জন্য কোনো রাস্তা না থাকায় পার্শ্ববর্তী ফসলি জমির ওপর দিয়েই ট্রাক চালিয়ে মাটি নেওয়া হচ্ছে ইট ভাটায়। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে জমির ফসল।

ওই এলাকায় রয়েছে তিনটি ইটভাটা। এসব ইটভাটার দখলে রয়েছে প্রায় ৫০ একরেরও বেশি জমি। ইটভাটার ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমবাগান। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ বিঘারও বেশি ফসলি জমি এবং অসংখ্য আমবাগান ক্ষতির মুখে।

স্থানীয়রা জানান, ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য একশ্রেণির দালাল চক্র গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায় এবং স্বল্পমূল্যে উপরিভাগের এসব মাটি কেটে কিনে নেয়। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কথা না জেনে সহজ-সরল কৃষকরা নগদ লাভের আশায় জমির মাটি বিক্রি করেন। ইটের ভাটায় মাটির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফসলি জমির মাটি বেচাকেনা হচ্ছে বেশি। আসলে তারা এসব ক্ষতির বিষয়টি জানেন না বলেই মাটি বিক্রি করছেন।

ওই এলাকার জমির মালিক এনামুল হক জানান, এখানে তার এক একর ৬ শতাংশ জমি রয়েছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী জমির মাটি কাটার পর জমির অনেক অংশ ভেঙে গেছে। জমি দিনদিন নেমে যাচ্ছে পাশের পুকুরে। আবারো জমির অন্যপাশের মাটি কাটা শুরু করেছে। মাটি কাটা বন্ধ না হলে তার জমির অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে। এ রকম একাধিক অভিযোগ করেছেন তেররশিয়া গ্রামের জমির মালিক একরামুল, আশরাফুরলসহ আরো অনেকে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সেলিম বলেন, আমি টাকার বিনিময়ে জমি লীজ নিয়ে মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করি। চার বছর ধরে তিনি মাটির ব্যবসায় জড়িত। নতুন করে আরো ৩ বিঘা জমি তিনি ১২ লাখ টাকায় লীজ নিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করছেন। এতে তিনি কোন অন্যায় দেখছেন না।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সালেহ আকরাম জানান, জমির উর্বরতা শক্তি উপরিভাগ থেকে ১৫-২০ ইঞ্চির মধ্যে থাকে। তাই মাটির উপরিভাগ সরিয়ে ফেলায় উর্বরতা শক্তি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় সেই জমির ওপর বিভিন্ন পদার্থ জমে উর্বরতা শক্তি ফিরে আসতে শুরু করে। এভাবে আগের মতো উর্বরতা শক্তি ফিরে আসতে ৮-১০ বছর সময় লাগে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আইনগতভাবে জমির টপ সয়েল কাটার সুযোগ নেই। এতে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়। এ ধরনের লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরোও বলেন, মাটি বিক্রি করে কৃষকদের সাময়িক অভাব দূর হলেও ক্ষতি হয় অনেক বেশি। আমরা আইন প্রয়োগের পাশাপাশি কৃষক পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close