আবু ইউসুফ, রাণীনগর (নওগাঁ)

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

পোকার আক্রমণে উৎপাদন কম, ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তির শঙ্কা

রানীনগরে ১৮ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ

নওগাঁর রানীনগরে চলছে ধান কাটা মাড়াইয়ের ভরা মৌসুম। নানা রকম রোগ-বালাইয়ে একদিকে যেমন ধানের ফলন কমে গেছে, অন্য দিকে ন্যায্য দর না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। গত ইরি-বোরো মৌসুমে একই অবস্থায় লোকসানের পর আমন আবাদেও লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলা জুড়ে ১৮ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল ১৭ হাজার ৮৮০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত রয়েছে ২৪৫ হেক্টর জমিতে। এতে চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৮১ হাজার ৫৬২ মেট্রিকটন। যদিও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম কৃষকদের দাবি নাকোচ করে বলেছেন, কোথাও ধানের ফলন কম হয়নি, লক্ষ্যমাত্রা যা নির্ধারণ করা আছে তার অধিক হবে। কিন্তু কৃষকরা বলছেন, ব্লাস্ট, খোলপচাসহ বিভিন্ন রোগের আক্রমনে শীষ মরে যাওয়ায় ধানের ফলন কমে গেছে। ফলে চলতি মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।

কৃষকদের মতে, গত ইরি-বোরো মৌসুমে নানা কারনে ধানের ফলন কমে যাওয়ায় এবং সরকার নির্ধারিত দর না পাওয়ায় ব্যাপক লোকসানের কবলে পড়েন কৃষকরা। লোকসান পুশিয়ে নিতে আমন আবাদে কোমড় বেঁধে মাঠে নামেন তারা। অনেকেই হাঁস-মুরগি, কেউবা আবার গরু-ছাগল বিক্রি করে এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে সাপ্তাহিক অথবা প্রতিদিনের কিস্তিতে ঋণ নিয়ে আমন আবাদ করেছেন। আবাদের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান বেশ ভাল হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাশ, দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না কৃষকদের। গাছ থেকে ধান বের হতেই ব্লাস্ট এবং খোলপচাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষ মরতে থাকে। এর পরে ধান কাটা-মাড়াই করে একদিকে যেমন আসানুরুপ ফলন পাচ্ছেন না অন্যদিকে বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। চলতি মৌসুমে সরকার মোটা ধান এক হাজার ৪০ টাকা প্রতি মন ধানের দর বেধে দিলে এ উপজেলা থেকে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ১৮শ’ ৬১ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের উদ্বোধন করা হয় গত ২০ নভেম্বর। ওই দিনই মাত্র ৫ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হলেও অভিযান ঝিমিয়ে পড়ায় এর কোন প্রভাব বাজারে পড়েনি। ধানের মোকাম খ্যাত আবাদপুকুর বাজারে গত বুধবার সেই ধান রকম ভেদে ৫৮০ টাকা থেকে ৭১০ টাকা মন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া আতব ধান প্রতি মন এক হাজার ৩শ’ থেকে এক হাজার ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এতে গৃহস্থরা আবাদ করে আংশিক লোকসানের কবলে পরলেও বড় লোকসানে পরেছেন বর্গা চাষীরা। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ধানের আবাদ করতে রোপন থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে ৯ হাজার থেকে জমি ভাড়া (বর্গা অংশ)সহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে কৃষকদের। পক্ষান্তরে প্রতি বিঘা জমিতে এলাকা ভেদে ৮ থেকে ১৬ মন পর্যন্ত ধানের ফলন হচ্ছে। ফলে ফলন কম এবং ন্যায্য দর না পাওয়ায় প্রতি বিঘা জমিতে ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা সরকারী ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে লটারীর মাধ্যমে কৃষকদের নাম অর্ন্তভুক্ত করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে এসব ধান সংগ্রহ শুরু হলে স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পরবে। এতে কৃষকরা কিছুটা হলেও দর বেশি পাবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close