আবদুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ

  ২১ নভেম্বর, ২০১৯

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ

সরকারি জায়গা দখল করে চোরাই টায়ার মার্কেট

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে চোরাই টায়ার মার্কেট। সংঘবদ্ধ একটি চক্র এই মার্কেট গড়ে তুলেছে। টায়ার পোড়ার দুর্গন্ধে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন আশপাশের বাসিন্দারা।

অভিযোগ আছে, টায়ার ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসায়ের জড়িয়ে পড়েছে অনেকে। তবে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জায়গায় নাগরিক ভোগান্তির মার্কেট সম্পর্কে জানে না সিটি করপোরেশন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে নয়াআটি মুক্তিনগর এলাকায় ওঠা মার্কেটের নাম ‘বিবাড়িয়া টায়ার মার্কেট’। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা এই মার্কেটে আছে তামিম টায়ার স্টোর, নিউ মায়ের দোয়া টায়ার স্টোর, মেসার্স উম্মে আয়মন টায়ার স্টোরসহ বাহারি নামের অর্ধশতাধিক দোকান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন জেলার কারখানা ও চোর সিন্ডিকেটের কাছ থেকে চোরাই টায়ার এনে এই মার্কেটে নিশ্চিন্তে বেচাকিনা করা হয়। নষ্ট পুরোনো টায়ার জোরাতালি দিয়ে রং করে নতুন বলে চালিয়ে দিচ্ছে চক্রটি। মার্কেটের সামনে বিশাল খালি জায়গায় হাজার হাজার পুরোনো টায়ার ফেলে রাখা হয়েছে। পরিত্যক্ত এসব টায়ারে জন্ম নিচ্ছে মশা।

মার্কেটে পাশের বাসিন্দা আলামিন জানায়, টায়ার পোড়া দুর্গন্ধে বসবাস করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারি না। দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব। তাছাড়া মশার উপদ্রবে টেকা যায় না। একই সমস্যা উল্লেখ করে নিউ মুক্তি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক আবদুল মতিন বলেন, ঘনবসতি আবাসিক এলাকায় এ ধরনের মার্কেট কীভাবে হয় তা বোধগম্য নয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত টায়ারে পানি জমে রয়েছে। পানিতে মশার লার্ভাও দেখা যায়। মাসের পর মাস টায়ার ফেলে রাখায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। বর্তমানে যে জায়গাতে মার্কেট করা হয়েছে তা কয়েক বছর আগেও সরকারি খাস জমি হিসেবে জলাশয় ছিল বলে জানান স্থানীয়রা।

অভিযোগ রয়েছে, মার্কেট কমিটির সভাপতি জালালের ছোটভাই টায়ার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামকে মার্কেটের সামনে থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ র‌্যাব-১১ আটক করে। তিনি টায়ার বহনকারী পিকআপ ভ্যান দিয়ে কুমিল্লা ও টেকনাফ থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান এনে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় সরবরাহ করতেন বলে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করে। তার ছোট ভাইকেও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। এমনকি সভাপতি জালালকেও সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখেন না স্থানীরা। শুধু তারাই নয়, এ মার্কেটের অনেকই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুক জানান, চোরাই টায়ার ও ইয়াবার বিষয়ে আমি সঠিক জানি না। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব ।

মাহবুব নামে এক দোকান মালিক জানায়, কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের সঙ্গে কথা বলে এ মার্কেট করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এখানে ব্যবসা করছি।

মার্কেট কমিটির সভাপতি জালাল জানায়, স্থানীয় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে মার্কেট করা হয়েছে। তবে সামনের সরকারি জায়গার কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। চোরাই টায়ার বেচাকেনা ও ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।

সরকারি জায়গা ব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে কথা হয় স্থানীয় কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের সঙ্গে। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, তাদের বহুবার বলা হয়েছে এখান থেকে মার্কেট সরিয়ে নিতে। তারপরও সরাচ্ছে না। আমি দ্রুতই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সওজ নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, সরকারি জায়গায় মার্কেটের কোনো অনুমতি দেইনি। খুব শিগরিরই অভিযান চালিয়ে মার্কেট উচ্ছেদ করে সরকারি জমি দখল মুক্ত করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এহতেশামুল হক জানান, এ মার্কেটের বিষয়ে আমি অবগত নই। মানুষের সমস্যা হয় এমন কোনো মার্কেট সিটি এলাকায় থাকবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close