কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

  ১৮ নভেম্বর, ২০১৯

গাজীপুরের কালিয়াকৈর

শতাধিক স’মিল অবৈধ

গাজীপুরে কালিয়াকৈর উপজেলায় অননুমোদিতভাবে গড়ে উঠেছে শতাধিক করাতকল (স’মিল)। এমনকি উপজেলার কিছু এলাকায় খোদ বনভূমি দখল করে করাতকল গড়ে উঠেছে। অবৈধ এসব করাতকলে বনভূমি থেকে চুরি হওয়া বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের খ- চেরাই করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। অভিযোগ আছে, প্রকাশ্যে বনের কাঠ চেরাই করালেও দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিচ্ছেন দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করছেন তারা। কালিয়াকৈর বন বিভাগের মাঠপর্যায় কর্মকর্তাদের মতে, ‘গত এক দশকেই শতাধিক অবৈধ করাতকল গড়ে উঠেছে। কালিয়াকৈরে বর্তমানে অবৈধ করাতকলের সংখ্যা দেড় শতাধিক।’ এদিকে কালিয়াকৈর করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ উপেক্ষা করে একের পর এক গড়ে উঠছে অবৈধ করাতকল (স’মিল)। মাঝেমধ্যে এর বিরুদ্ধে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে অর্থদ- এবং মালামাল জব্দ করা হয়। সম্প্রতি কয়েকটি করাতকলের স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবু থামছে না অবৈধ করাতকলের বনবিধ্বংসী কর্মকা-।

বন বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলায় অনুমোদনবিহীন করাতকল মালিকরা ‘করাতকল সমিতি’ গড়ে তুলেছেন। এতে মদদ দিচ্ছে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও অবৈধ করাতকল বন্ধে নিরব ভূমিকায়। অথচ কালিয়াকৈর করাতকল লাইসেন্স প্রদানে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিটি রয়েছে। গত বছর করাতকল মালিক সমিতি জেলা প্রশাসনে একটি স্মারকলিপিও দিয়েছিল। ঢাকা বন বিভাগের অধীন গাজীপুর কাচিঘাটা রেঞ্জের সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোহসিন মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, মাঠ পর্যায়ের কিছু অসাধ কর্মকর্তাদের কারণে করাতকল উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকার পরেও সুফল মিলছে না। এখন অভিযান হলে ঘুষের রেট বাড়ে।’ তিনি জানান, কালিয়াকৈর ও কাচিঘাটা রেঞ্জে অন্তত ১৬০টি অবৈধ করাতকল। মামলা দেয়, আবার আপসও করে। তার আমলে কাচিঘাটা রেঞ্জে অবৈধ করাতকল উচ্ছেদে জোরালো অভিযান হয়েছে বলেও তিনি জানান। করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ মতে, সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত বা অন্য যে কোন ধরনের সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে নূন্যতম ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। এই বিধিমালা লঙ্ঘন করলে ২ মাস বা অনধিক ৩ বছর কারাদ- দেয়ার বিধান আছে। সেই সঙ্গে ২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। তারপরও গড়ে উঠছে অবৈধ করাতকল। করাতকলের লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায়, সরকার নির্ধারিত ফি প্রদান ও জমা রশিদ সংযুক্ত করে আবেদন ফরম এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে হয়। এর ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীর তথ্যাদির প্রমাণ যাচাই করে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ফরেস্টার বা তদুর্ধ্ব কোন কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

এছঅড়া জেলা পর্যায়ে করাতকল লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক ওই জেলার খোদ জেলা প্রশাসক। এ ছাড়া ওই কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি দ্বারা মনোনীত একজন প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) সংযুক্ত থাকেন।

কালিয়াকৈর অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ করার বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ ইউছুফ জানিয়েছেন, ‘ঢাকা বন বিভাগের অধীন গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ করতে মোবাইল কোর্টেরে অভিযান চলমান রয়েছে।’

জানতে চাইলে কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আজহারুল ইসলাম জানান, ‘কালিয়াকৈর রেঞ্জে অনুমোদনবিহীন করাতকল সংখ্যা ১১১টি। ইতোমধ্যে অবৈধ এসব করাতকল উচ্ছেদের জন্য তালিকা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছেও তালিকা পাঠানো হয়েছে।’

কালিয়াকৈর রেঞ্জে খোদ বনভূমি দখল করে করাতকল গড়ে উঠেছে। এসব করাতকল বন্ধে আপনার ভূমিকা কেমন প্রত্যাশা করা যেতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘বনভূমি দখল করে গড়ে ওঠা করাতকলগুলো উচ্ছেদসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close