নওগাঁ প্রতিনিধি

  ১৭ নভেম্বর, ২০১৯

নওগাঁয় বছরে ৪ মাস পানির নিচে সড়ক, স্থানীয়দের দুর্ভোগ

নওগাঁয় সদর উপজেলার দুবলহাটি থেকে ভীমপুর। দুরুত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রাস্তা থাকলেও বছরের চার মাস থাকে পানির নিচে। বর্ষা মৌসুমে কালিপুর, সুনুলিয়া, হাতাস, প্রতাবদহ ও শশিধরপুরসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে আর বর্ষা মৌসুমে নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা। ভীমপুর থেকে বারোমাসা বিল (বিল মুনছুর) পার হয়ে হাতাস গ্রাম। দুরুত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। যেখানে সড়কের সংযোগ ছাড়াই রয়েছে চারটি ব্রিজ। বর্ষা মৌসুমে এই ব্রিজগুলো কোন কাজে আসেনা।

জানা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলা শহরের আরজি-নওগাঁ শাহী মসজিদ থেকে হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়ক। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ করা হয়েছে। আবার দুবলহাটি বাজার থেকে ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত বাকি আছে ৬ কিলোমিটার। দুবলহাটি বাজার থেকে হাঁসাইগাড়ী বিলের মধ্য দিয়ে কাটখৈর বাজার হয়ে ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত যে পাকা সড়ক রয়েছে তার দুরুত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার।

অপরদিকে, দুবলহাটি বাজার থেকে প্রতাবদহ, শশিধরপুর, কালিপুর, চোয়ারাপাড়া, হাতাস, মধ্যহাতাস ও সুনুলিয়া গ্রাম হয়ে বারোমাসা (বিল মুনছুর) বিলের মাঝ দিয়ে ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তা। এ ৬ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ করা হলে সদর উপজেলাসহ জেলার মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামসহ প্রায় লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের সুবিধা হবে।

একই সড়কের ভীমপুরগ্রাম থেকে বারোমাসা বিল পার হয়ে হাতাস গ্রামের দুরুত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। যেখানে সড়কের সংযোগ ছাড়াই রয়েছে চারটি ব্রিজ। বর্ষা মৌসুমে এই ব্রিজগুলো কোন কাজে আসেনা। বছরে চার মাস রাস্তা পানির নিচে ডুবে থাকে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বন্যার সময় গ্রামগুলোর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। ব্রিজ আছে কিন্তু রাস্তা নাই। রাস্তা হলে অনেক উপকার হতো। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে দ্রুত বোরো ধান সংগ্রহ করা যেত। সড়কটি দ্রুত সংষ্কার করা হলে সহজেই ক্ষেতের জমিতে যাতায়াত করা যেত। ফসলের উৎপাদনও হতো দ্বিগুণ।

ভীমপুর গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান সরদার বলেন, তার ১২ বিঘা জমি এ মাঠে আছে। হাজার হাজার বিঘা জমি রয়েছে বারোমাসা বিলে। ধান কাটার সময় হঠাৎ করে বৃষ্টি হলে ফসল ডুবে যায়। তখন ধান কাটা ও জমি থেকে উঠানো নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় কৃষকদের। এতে শ্রমিক খরচ বেশি পড়ে। কয়েকটি ব্রিজ পানির মধ্যে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। রাস্তা থেকেও নেই বললেই চলে। যদি রাস্তাটি সংস্কার করা হয় তাহলে ধান কেটে সহজেই রাস্তায় উঠিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসা সম্ভব।

একই গ্রামের এসএম জালাল হোসেন পিন্টু বলেন, ব্রিটিশ সময় থেকে রাস্তাটি আছে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে রাস্তাটি কোন কাজে আসছে না। উপর থেকে পানি এসে মাঠের ধান ডুবে যায়। গতবছর একটি খাল খনন হওয়ার পর কিছুটা উপকার হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে ধান কাটতে যেখানে ২ হাজার টাকা খরচ হতো সেখানে বৃষ্টির কারণে ৪/৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এই রাস্তাটি হয়ে গেলে জেলা শহরের সাথে দুরুত্ব অনেক কমে যাবে। অল্প খরচে মানুষ চলাচল করতে পারবে। ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ন (চার) মাস পর্যন্ত রাস্তা ডুবে থাকে। অগ্রহায়নের শেষের দিকে রাস্তা জেগে উঠে।

নওগাঁ সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইমতিয়াজ জাহিরুল হক বলেন, ওই রাস্তা সংস্কারে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকার একটা প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসার পর রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।

নওগাঁ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই রাস্তাটি এলাকাবাসীর জন্য খুবই জরুরী। রাস্তা করা হলে বিশেষ করে কৃষি কাজের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। প্রতি বছরই কৃষকদের ফসল নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা রাস্তাটি সংস্কারের জন্য আলোচনা করেছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close