বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

  ১৭ নভেম্বর, ২০১৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিল নিয়ে বিরোধ

প্রতিপক্ষের আগুনে শতাধিক ঘর ভস্মীভূত, নিঃস্ব ৩১ পরিবার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে বিল নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধে সর্বশান্ত হয়েছেন জোসনা। আগুনে ছাই হয়েছে দুটি ঘরসহ সমস্ত মালামাল। স্কুল পড়–য়া দুই মেয়ের বই-স্কুলে যাওয়ার পোষাকসহ সবই ছাই। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। শুধু জোসনা নয়, এমন অবস্থা আরো ৩২টি পরিবারের। টিনের ঘর, আধা পাকা দালান ঘর সবই শেষ আগুনে। পেট্রোলের আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এসব ঘর-বাড়ি। এ ঘটনায় থানায় মামলাও নেয়নি পুলিশ। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মেহের নিগারকে লিখিতভাবে জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

উপজেলার কামালপুর ও হাজীপুরের সর্বশান্ত মানুষগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। গত ৩ নভেম্বর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের বিল হুগলী নিয়ে বিরোধে জড়ায় দু’পক্ষ। ওই সময় পেট্রোল ঢেলে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেন বিলের ইজারাদাররা। এরআগে ২ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপরও হামলা হয়। এসময় ১১০ রাউন্ড রাবার বুলেট, ৫ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ১ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।

সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বিল নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। সীমানা নির্ধারন না করে ইজারা দেয় প্রশাসন। গত বছর বড় উঠান মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি ২৪ একর ৮৮ পয়েন্ট আয়তনে ১ লাখ ৫১ হাজার টাকায় ইজারা নেয়। অভিযোগ রয়েছে, ইজারা নিয়ে সমিতি ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে বুল্লা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ফুল মিয়া ও বর্তমান ইউপি সদস্য কাউসার আহম্মেদের কাছে। তারা কৃষকদের ব্যাক্তিগত জমি থেকে মাছ আহরন করলে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। হাজীপুর গ্রামের বদরুল আলম জানান, হুগলী বিলে বুল্লার কাউসার মেম্বারের নেতৃত্বে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা হয়। গত দেড়মাস আগে আদালত থেকে তাদেরকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়। ২ নভেম্বর অস্ত্র নিয়ে ইউএনও এবং পুলিশের ওপর হামলা করে। পরদিন মাছ ধরার সময় হাজীপুর, হাতুরাপাড়, পাইকপাড়া বাগদিয়া ও বুল্লার মানুষের সঙ্গে বিবাদ হয়। হরষপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম জানান, বুল্লা, বড় উঠান, বড়ছাল, নয়াহাটি ও মাইঝপাড়ার লোকজন নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি পেট্রোল দিয়ে আগুন দেয়। নেতৃত্ব ছিলেন বুল্লার ফুল ইসলাম, বর্তমান ইউপি সদস্য কাউসার আহমেদ, আশু মিয়া, হীরা লাল, নারায়ন দাশ ও আজিজুল। কামালপুর গ্রামের ফুল মিয়ার ৫টি ঘরই পুড়ে গেছে আগুনে। এ ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেও সাড়া মেলেনি।

সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল ইসলাম বলেন, তারা যে অভিযোগ দিয়েছিলো তাতে অতিরিক্ত লেখা হয়েছে। সেজন্যে মামলা হয়নি। একটু প্রেসারে থাকুক, সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রেসারে থাকলে ভবিষৎতের জন্যে ভালো হবে। ইউএনও মেহের নিগার জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, শিক্ষার্থীদের বই পুড়ে গেছে এবং সামনে তাদের পরীক্ষার কথা শুনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বৃহস্পতিবার পাঠানো হয়। তারা কয়েকজন শিক্ষার্থীদের বই দিয়ে এসেছে। বিল নিয়ে দুটি মামলা চলমান রয়েছে। স্থানীয়রা বসে বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close