আকিব হৃদয়, কিশোরগঞ্জ

  ১৬ নভেম্বর, ২০১৯

কিশোরগঞ্জ

ভাসমান বেডে সবজি চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে হাওরাঞ্চলে

জলাবদ্ধতার কারণে পতিত জমিতে ভাসমান বেডে পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার কৃষকরা। কচুরিপানা দিয়ে তৈরি ভাসমান বেডে বিভিন্ন প্রকার সবজির ভালো ফলন হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন তারা। এতে অনাবাদি জমিতে উৎপাদন হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি।

দেড় বছর ধরে ভাসমান বেড পদ্ধতিতে অর্ধশতাধিক বেডে বিভিন্ন প্রকার সবজি আবাদ করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। প্রায় সারা বছর জলাবদ্ধতা থাকে এবং বন্যা ও বৃষ্টির জন্য যেসব এলাকার জমি পানিতে ডুবে থাকে, সেসব জায়গায় কৃষি বিভাগ মাঠ প্রদর্শনীর মাধ্যমে কলাগাছের ভেলায় এবং কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করে দিয়েছে। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে যথেষ্ট লাভ হওয়ার কারণে কৃষকদের মধ্যে দিন দিন যেন আগ্রহ বাড়ছে। ফলে কম জমিতে বেশি ফসল আবাদ সম্ভব হচ্ছে বলেও জানিয়েছে কৃষকরা।

জেলা শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এককালের খরস্রোতা নরসুন্দা নদী, করিমগঞ্জ উপজেলার জঙ্গলবাড়ি এলাকার খাল ও মরিচখালিতে পুকুর এবং নিকলী উপজেলায় উন্মুক্ত জলাশয়ে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ করা হয়েছে। এতে জেলার অন্যান্য উপজেলার কৃষকদের মধ্যে এ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। করিমগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি এলাকার দুলাল মিয়া ও সিরাজুল ইসলাম, নিকলী উপজেলার আ. কাদির পাশের খালে এবং সদরের আল আমিন নরসুন্দা নদীতে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করেছেন। তারা জানান, ভাসমান বেডে যে সবজি চাষ করা যায়, আগে তাদের জানা ছিল না। কৃষি কর্মকর্তাদের উৎসাহে পরীক্ষামূলকভাবে ভাসমান সবজির বেড করেন। ফসল যা হয়েছে তা দেখে প্রাণ জুড়িয়ে গেছে।

কৃষকেরা জানান, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় কখনও ডুববে না, সেচের প্রয়োজন পড়বে না। কোনো প্রকার কীটনাশক ছাড়াই জৈব সার ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। তাছাড়া এ পদ্ধতির চাষ করা সবজি দেখতে যেমন সুন্দর দেখায়, তেমনি খেতেও সুস্বাদু।

এদিকে ভাসমান বেডে চাষাবাদের জন্য উৎসাহী করতে এবং এটিকে একটি লাভজনক পদ্ধতিতে পরিণত করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শ দেওয়াসহ মাঠ প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কৃষি গবেষণা সূত্র জানায়, ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ একটি প্রাচীন পদ্ধতি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ প্রায় ২০০ বছর ধরে এ পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছেন। কিন্তু তারা আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতেন না। তাছাড়া বেড নির্মাণের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিমাপ ছিল না।

কৃষি অফিস জানায়, সনাতন পদ্ধতির বেডগুলোর ১০০ থেকে ১৫০ ফুট লম্বা ছিল। ফলে বেড ব্যবস্থাপনায় কৃষক বিভিন্ন সমস্যায় পড়তেন। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষণার মাধ্যমে ৩০ ফুট লম্বা ও দশমিক ৫ ফুট প্রশস্ত পরিমাপের বেড নির্ধারণ করেছে। ফলে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়, কীটনাশক লাগে না ও জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজে রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া উচ্চ ফলনশীল শশা, বরবটি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, ধুন্দল, করলা, ঢেঁড়স, লালশাক, পাটশাক, পালংশাক, পুঁইশাক ও মুলাশাকসহ উন্নত জাতের হলুদ চাষ সম্ভব হয়েছে। হাওড় এলাকায় এ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দীন জানান, ভাসমান বেডে সবজি চাষ খুবই লাভজনক। আর তাই এলাকার কৃষকদের পরামর্শ দিলে চাষীরা এ পদ্ধতিতে চাষ করতে রাজি হয়েছে। এ বছর সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে অন্য কৃষকদের মধ্যেও আগ্রহ দেখা দিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close