ফারুক খান, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)

  ২৪ অক্টোবর, ২০১৯

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ

আমনখেতে আলোকফাঁদ কমছে ক্ষতিকর পোকা

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে আমন ধানখেতে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে ১১০টি আলোকফাঁদ বসানো হয়েছে। আর আলোরফাঁদের পাশাপাশি খেতে পাচিং পদ্ধিতিতে (ডাল পোতা) ব্যবহার করছে কৃষকরা। এসব ব্যবহারে পোকা দমন করার কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। এ আলোর ফাঁদের ব্যবহারের ফলে কৃষকরা বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করতে পারবে বলে কৃষি বিভাগ জানান।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে চলিতি মৌসুমে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল ব্রি-ধান-৫২ এবং ২৩ ধান চাষ করা হয়েছে ৮০০ হেক্টর জমিতে। বাকি ১০ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করার মাধ্যমে আশানুরূপ ফলন উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রতি বছরই হাজারো কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পেয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগের ব্যতিক্রমী এই উদ্ভাবন পদ্ধতি। কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকিতে কৃষকরা ধান রোপণ শেষ হওয়ার পর থেকে জমিতে আলোকফাঁদ স্থাপনের কাজ শুরু করেন। এ বছর ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর আমন ধানখেতে বসানো হচ্ছে ১১০টি আলোকফাঁদ এবং আরো আলোক ফাঁদের কাজ চলমান আছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. গোলাম ফারুক সানু বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের আমন ধানখেতে প্রতি বছরের মতো কৃষি বিভাগের তরফ থেকে ‘আলোকফাঁদ’ স্থাপন করা হয়েছে। আলোর ফাঁদ বসিয়ে খেতে পোকামাকড়ের উপস্থিতি জরিপ করা হচ্ছে। যেসব এলাকায় পোকা বেশি দেখা যায় সেসব জায়গায় আলোক ফাঁদ বেশি বসানো হয়। জমিতে রাতের বেলায় একটি স্থানে বালতির ওপর অংশে বৈদ্যুতিক ভাল্বের আলো জ্বালিয়ে দিলে খেতের ভেতরে থাকা ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ওড়ে এসে জড়ো হয়ে বালতির পানিতে পড়ছে। পরে এসব পোকামাকড় পানিতে আটকে গেলে আর উঠতে পারে না। পরে পানিতে আটকা পড়া ক্ষতিকর পোকামাকড়গুলো কৃষকরা মেরে ফেলেন। এভাবে আমন ধানখেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা বলেন, জমিতে এই পদ্ধতিতে আলোকফাঁদ বসিয়ে এবং ডাল পোতার মাধ্যমে পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতে স্থানীয় কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে কৃষি বিভাগের ব্যতিক্রমী এই উদ্ভাবনী দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আরাফাত হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। চাষকৃত এসব জমিতে ১১০টি আলোকফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে এবং অস্থায়ী ভিত্তিতে আরো আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হবে। ফলন ঘরে তোলার পর অস্থায়ী আলোর ফাঁদ গুলো উঠিয়ে নেওয়া হবে। আলোর ফাঁদ স্থাপনের মাধ্যমে ক্ষেতে পোকামাকড়ের উপস্থিতি সনাক্ত করণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়ে সেমিনার করে চাষের আগে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবার বিষ মুক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য আলোক ফাঁদ পদ্ধতি বেশ উপযুগী। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, ফসলের জন্য ক্ষতিকর প্রাণি পোকামাকড় নির্ণয় এবং তা প্রতিরোধে ‘আলোক ফাঁদ’ পদ্ধতি একটি সফল ও পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনা। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা কোন ধরনের খরচ ছাড়াই সহজে ফসলের ক্ষতি ঠেকাতে পারে। প্রতিবছর কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আলোক ফাঁদ পদ্ধতির সুফল সর্ম্পকে কৃষকদেরকে ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি বলেই প্রতিবছর আলোক ফাঁদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close