প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৩ অক্টোবর, ২০১৯

অভিযানেও থেমে নেই ইলিশ ধরা

প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য প্রশাসন ও মৎস্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে চালান হচ্ছে অভিযান। প্রতিদিনই জেলে আটক, জাল ও মাছ জব্দ করা হচ্ছে। তারপরও নিষেধাজ্ঞার উপেক্ষা করে দেশের কোনো কোনো উপজেলায় ইলিশ ধরা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অভিযোগ আছে, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যদের সহযোগিতায় ইলিশ ধরছেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার সরকারি নির্দেশ অমান্য করে পদ্মায় ইলিশ ধরার দায়ে এক এএসআই ও কনস্টেবলসহ ২০ জনকে আটক করেছে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও র‌্যাব। একই দিনে ভোলায় দফাদারের নেতৃত্বে মা ইলিশ শিকারের দায়ে ৫ গ্রাম পুলিশসহ ৯ জনকে কারাদ- দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এদিকে মাছ ধরা বিরতির সহায়ক হিসেবে দেওয়া চালের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন জেলেরা। এমনকি পাবনার বেড়া উপজেলায় জেলেদের জন্য তেমন কোনো বরাদ্দ নেই। ফলে সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রতি সম্মান জানাতে গিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটছেন তারা।

তবে মৎস্য অধিদফতরে জনবল সংকট ও জেলেদের অধিক গতি সম্পন্ন ইঞ্জিনের নৌকার বিপরীতে চলতে না পারায় সব সময় অভিযান চালানো যাচ্ছে না জানা গেছে। ইলিশ মাছের প্রজনন নির্বিঘœ করতে মৎস্য বিভাগ ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।

আমাদের প্রতিনিধিদের বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি আরিফ খাঁন, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে আমিনুল ইসলাম রানা, তানোর (রাজশাহী) থেকে মিজানুর রহমান, রাজবাড়ী থেকে খন্দকার রবিউল ইসলাম ও ভোলা থেকে আদিল হোসেন তপুর পাঠানো খবরÑ

বেড়া (পাবনা) : উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী বেড়া উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে তালিকাভুক্ত মৎস্যজীবীর সংখ্যা ৩ হাজার ৬৩৪ জন। তবে উপজেলার কয়েকটি মৎস্যজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী এই সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি। কিন্তু ইলিশ সংরক্ষণের জন্য এই উপজেলার জেলেদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই বলে জানিয়েছে মৎস্য অফিস।

সরেজমিন পাওয়া তথ্যে জানা যায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ সদস্যদের নৌকাপ্রতি নির্ধারিত হারে উৎকোচ দিয়ে নদীতে মাছ ধরার অনুমতি কার্ড মিলেছে।

জানা যায়, ইউএনও আসিফ আনাম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গত ১৪ দিনের অভিযানে ক্রেতা-বিক্রেতা, জেলে, মহাজনসহ প্রায় ৪২ জনকে জেল-জরিমানা ও ৩ লাখ ২৭ হাজার মিটার কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, ‘বেড়াসহ পাবনার ৪ উপজেলার পদ্মা ও যমুনা অংশসমূহ ইলিশ প্রজননের কমান্ড এলাকা হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। এই এলাকাসমূহে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৮৯ জন। আমরা এসব জেলের জন্য সরকারি সহায়তা চেয়ে বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখে চলেছি।’

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মার কোল ঘেঁষা রাজবাড়ীর গোলান্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ইলিশ শিকারে ধুম চোখে পড়ার মতো। নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে অনেক জেলে জানান, গোয়ালন্দ উপজেলাধীন জেলেদের আনাগোনা তেমন দেখা না গেলেও পার্শ্ববর্তী জেলা পাবনা ও মানিকগঞ্জের জেলেরাই নদীতে ইলিশ শিকারে ব্যস্ত রয়েছেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় এ পর্যন্ত ৬২ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল শরীফ জানান জনবল ঘাটতি ও আর্থিক সঙ্কট রয়েছে।

রাজবাড়ী : সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদ্মায় ইলিশ ধরায় গতকাল ভোরের দিকে সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এএসআই ও কনস্টেবলসহ ২০ জনকে আটক করেছে জেলা প্রশাসন ও র‌্যাব। এ সময় অভিযানে ২৫ কেজি মাছ ও ১ লাখ মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে।

আটককৃত এএসআই হলেন রাজবাড়ী পুলিশ লাইসনের মো. সফিকুল ইসলাম ও কোর্ট পুলিশের কনস্টেবল ওসমান গনি। এদের বিরুদ্ধে আইন প্রক্রিয়া শেষে জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সদর থানার এসআই মো. জাহিদের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

ভোলা : ভোলায় দফাদারের নেতৃত্বে মা ইলিশ শিকারের দায়ে পাঁচ গ্রাম পুলিশসহ ৯ জনকে কারাদ- দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সকালে ভোলা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম মো. কাওছার হোসেন এ দ-াদেশ প্রদান করেন। এ সময় দিন মোহাম্মদ ও জসিম নামের দুই জেলেকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকালে মৎস্য বিভাগ ও নৌ পুলিশের একটি টিম ভোলার মেঘনা নদীতে অভিযানে নামে। এ সময় মেঘনা নদীর ভোলার খাল পয়েন্ট থেকে একটি ট্রলারে পাঁচজন গ্রাম পুলিশকে পোশাক পরিহিত অবস্থায় মাছ ও জালসহ আটক করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close