আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাদারীপুর

  ২১ অক্টোবর, ২০১৯

এক সেতুর অভাবে ১০ গ্রামের দুর্ভোগ

‘নির্বাচন এলেই শুনি বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে আমাগো পাকা সেতু করে দিবেন চেয়ারম্যান-মেম্বাররা। পঞ্চাশ বছর ধরে একই প্রতিশ্রুতি শুনে আসছি, কিন্তু আজ পর্যন্ত সেতুর মুখ দেখলাম না। আমাগো গ্রামের যুবকরা মিলে প্রতি তিন-চার মাস পর পর এলাকার সবার কাছ থেকে চাঁদা তুলে এই সাঁকোটিই সংস্কার করে। পাকা সেতু দিয়ে পারাপার হবোÑসেই আসা কি কোন দিন পুরণ হবে?’

কথাগুলো বলছিলেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার প্রত্যন্ত সূর্যমনি এলাকার ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ মো. ওহাব আলী হাওলাদার। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকতে নিজের চোখে এখানে সেতু দেখে যেতে পারলে মারলেও শান্তি পেতাম।’

আড়িয়াল খাঁ নদের শাখা কাঁচিকাটা খালের ওপর সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয়রা। উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই সূর্যমনি বাজার। এই বাজার থেকে রায়পুর ও ভাটবালী গ্রামে যেতে হলে বিশাল এক সাঁকো পাড়ি দিতে হয়। সাঁকোর ওই পাড়ে ৮নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের ১০টি গ্রামের অন্তত ৪ হাজার মানুষ এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন।

স্থানীয়রা জানান, সাঁকোটি সংস্কারের জন্য স্থানীয়দের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তিন থেকে চার মাস পরপরে সাঁকোটি সংস্কার করেন স্থানীয়রা যুবকরা। আবার অনেক সময় এ চাঁদা তুলতে ব্যর্থ হলে সাঁকোটি ভাঙ্গা অবস্থায় পরে থাকে। ফলে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে এলাকাবাসীসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও আসা-যাওয়া করছেন। অনেক সময় সাঁকো থেকে পা পিছলে নিচে পড়ে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচিকাটা খালের ওপর প্রায় দেড়শ মিটার লম্বা সাঁকো। খাল দিয়ে নৌকা ও ট্রালার চলাচল করে। সূর্যমনি বাজার থেকে ৮নং ওয়ার্ডের রায়পুর, ভাটবালী, চরলক্ষ্মী ও চরজোমহ ও বাশগাড়িসহ অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ এই সাঁকো দিয়ে দৈনিক যাতায়াত করেন।

দৈনিক সাঁকোটি দিয়ে চলাচলকারী রায়পুর এলাকার বাসিন্দা খাইরুল আলম বলেন, ‘সেতুর বদলে সাঁকো থাকায় আমাদের প্রতিদিন পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়। বিশেষ করে বৃষ্টি হলে সাঁকোটি দিয়ে চলাচল বড় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা অনেকটা সাবধানে পাড় হলেও ছোটরা এই সাঁকো পাড় হতে গিয়ে প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হয়।’

চরলক্ষ্মী এলাকার কলেজছাত্র সলেমান কাজী বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে পাড়াপাড় হতে হচ্ছে। রোজ পায়ে হেঁটে কলেজে, প্রাইভেটে যাই। সাঁকোটি পরিবর্তে একটি পাকা সেতু হলে আমাদের অনেক উপকার হতো। বাড়ির সামনে গাড়ি যেত, চলাচলে অনেক সুবিধা হতো, সময় বাঁচতো।’

সূর্যমনি বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ্ আল তুহিন বলেন, ‘বছর বছর জনপ্রতিনিধিরা সাঁকো বদলে সেতু নির্মাণের যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা আর পূরণ হয় না। আমাদের একটাই দাবি এখানে একটি সেতু করে দেওয়া হোক। সেতু হলে আমাদের এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধা হত।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘সাঁকোটি ভেঙে পাকা সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে জানিয়েছি। তারা এখানে এসে মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও গেছেন। আশা করছি এই বছরের শেষ হওয়ার আগেই টেন্ডার হবে।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর মাদারীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, সূর্যমনি এলাকায় কাঁচিকাটা খালের ওপর যেই সাঁকোটি আছে ওটার পরিবর্তে পাকা সেতু নির্মাণ করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে এলেই টেন্ডার দিয়ে দ্রুত কাজ শুরু হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close