শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার

  ১৭ অক্টোবর, ২০১৯

চকরিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স

নির্মাণ শেষের আগেই ভাঙা হচ্ছে ২ কোটি টাকার ভবন

কক্সবাজারের চকরিয়ায় কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে ফেলতে হচ্ছে দুইকোটি টাকা বরাদ্দের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছয় লেনের নতুন মাতামুহুরী সেতু নির্মাণের অংশ হিসেবে এই ভবন ভাঙা হচ্ছে। ভবনটি বর্তমানে চারতলা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আনুসাঙ্গিক কাজ শেষে চলতি বছরে তা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা ছিল।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ জানায়, ‘ক্রস বর্ডার রুট নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের’ আওতায় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা পয়েন্টে ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতুসহ একই সড়কে চারটি সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। এই চারটি সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩৫ কোটি টাকা। মাতামুহুরী সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে অনেক আগেই জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য জমি ও স্থাপনার মালিকদের ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা হয়েছে।

এদিকে চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা পয়েন্টের শতবছরের পুরনো মাতামুহুরী সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজের শুরুতে নতুন সেতুর দুই পাশে সংযোগ অংশে শতাধিক ব্যক্তিমালিকানাধীন দোকানপাট ও বসতঘরসহ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখনো উচ্ছেদ অভিযানের আওতায় রয়েছে ছোট-বড় বেশ কিছু স্থাপনা। তার মধ্যে অন্যতম স্থাপনা হচ্ছে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন। ভবনটি সেতুর একেবারে সন্নিকটে চকরিয়া জমজম হাসপাতালের প্রবেশপথে জেলা প্রশাসনের খাসজমিতে অবস্থিত।

এলজিইডি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রাণলয়ের অর্থায়নে চকরিয়া উপজেলা এলজিইডির অধীনে নির্মাণাধীন এই ভবনের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘দি ইঞ্জিনিয়াস্’ নির্মাণ কাজ শুরু করে। বর্তমানে ভবনটির চারতলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। আনুসাঙ্গিক কাজ শেষে চলতি বছর ভবনটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা। কিন্তু মাতামুহুরী সেতুর অ্যাপ্রোচ অংশে ভবনটির অবস্থান হওয়ায় নির্মাণ কাজ সমাপ্তির আগেই ভেঙে ফেলতে হচ্ছে ভবনটি।

জানতে চাইলে প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. জাহিদ হোসেন বলেন, সওজ বিভাগ থেকে চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী সেতু নির্মাণে অধিগ্রহণের আওতায় পড়া জায়গার মালিকদের জন্য ক্ষতিপূরণের সব টাকা জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, মাতামুহুরী সেতু নির্মাণে অধিগ্রহনের আওতায় যাদের সরকারি স্থাপনা, ব্যক্তিগত জমি বা স্থাপনা পড়েছে, সবাইকে তা ছেড়ে দিতে হবে। বিনিময়ে ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপুরণের টাকা পাবে। ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলার বেশিরভাগ জমি ও স্থাপনা মালিকের হাতে ক্ষতিপুরণের টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অধিগ্রহনের আওতায় পড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি ভেঙ্গে ফেলার নোটিশ দেওয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে। তবে ভবনটি ভেঙে ফেলার বিপরীতে এখনো কোন ধরণের ক্ষতিপুরণ পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন সংসদের নেতৃবৃন্দ।

এ প্রসঙ্গে ক্ষতিপূরণের জন্য এখনো কেউ আমাদের কাছে আবেদন করেনি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি জেলা প্রশাসনের খাসজমিতে নির্মিত হলে ওই জায়গার মালিক জেলা প্রশাসন। এখন জেলা প্রশাসন জায়গাটি যদি মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে দান করেন, বা লিজ দেন, সেক্ষেত্রে জমির মালিক হবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। সেক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আবেদন করলে আমরা তাদেরকে জায়গার ক্ষতিপুরণ দিতে পারবো। এ ছাড়া ভবনটি নির্মাণে যেহেতু এলজিইডি বা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রাণলায় অর্থায়ন করছে, সেহেতু সরকারি ওই প্রতিষ্ঠান সমূহ আবেদন করলে স্থাপনার ক্ষতিপুরণ দেবো।’ তবে যারা এখনো ক্ষতিপুরণ পায়নি, তাদের টাকা জেলা প্রশাসনে গচ্ছিত আছে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close