কেএম রুবেল, ফরিদপুর

  ১৪ অক্টোবর, ২০১৯

মধুমতির ভাঙনে বিলীন হচ্ছে স্কুল ভিটা রাস্তা

মধুমতিতে দ্বিতীয় দফা পানি বৃদ্ধিতে তীব্র ভাঙনের শিকার হয়েছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা। মাত্র ১৫ দিনের ভাঙনের উপজেলার তিনটি বিদ্যালয়, গুচ্ছগ্রামসহ বাসতবাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। গত ১৫ দিনে এই এলাকার তিনশতাধিক পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে আরো অর্ধশতাধিক স্থাপনা। উপজেলা ঘুরে এই দৃশ্য দেখা গেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিযুক্ত ঠিকাদার কোম্পানি নিয়মিত বালুর বস্তা ফেলছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে শুরু হওয়া মধুমতির ভাঙনে আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুরিয়া, গোপালপুর ও টগরবন্দ ইউনিয়নের তিনটি স্কুল বিলিন হয়েছে। এছাড়া একটি মাদরাসা, মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, পাকা সড়ক, বসতবাড়ীসহ নদীর গর্ভে চলে গেছে একটি গুচ্ছ গ্রাম। এ সময় ৩ শতাধিক পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের দুই কিলোমিটার জুড়ে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১১৮টি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই ইউপি চেয়ারম্যান এনাম হাসান শিপন জানান, তার ইউনিয়নের শিখাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাল, দারুল সালাম দাখিল মাদরাসা, একটি মসজিদ ও বড় গোরস্তান (কবরস্থান) নদীর গর্ভে চলে গেছে। এছাড়াও এই ইউনিয়নের একটি গুচ্ছ গ্রাম ও আশ্রয়ন প্রকল্পের ৬৫টি বাড়ী নদীতে চলে গেছে। আংশিক ভাঙনের স্বীকার হয়েছে শিকারপুর সড়ক ও চরডাঙ্গা-চরআজমপুর সদড়টি।

উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশি ভাঙনের শিকার হয়েছে বাজড়া গ্রাম। এলাকার অর্ধশত বসতবাড়ী অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হাসান জানান, তার ইউনিয়নের বাজড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ নদীর গর্ভে চলে গেছে। বিদ্যালয় বিলিন হয়ে যাওয়া ও খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নে দক্ষিণ পাঁচুড়িয়া পুরো গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে মধুমতি গর্ভে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমার সরদার জানান, ইউনিয়নে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ চর-নারানদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে কোন সময় ভেঙে যাবে বিদ্যালয়টি, উত্তর চর-নারানদিয়া গ্রামের কয়েকশ বাড়িঘর, ফসলি জমি, বাঁশতলা বাজার থেকে বোয়ালমারী উপজেলার যাতায়াতের পাকা সড়কের তিন কিলোমিটার নদীগর্ভে চলে গেছে।

পঞ্চিম চর-নারানদিয়া গ্রামের প্রাইমারি সরকারি স্কুল ভবন থেকে মাত্র ২০ হাত দুরে অবস্থান করছে নদী। জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাব খাতুন জানান, আমার বিদ্যালটি চরম ঝুঁকিতে রয়েছে, নদী থেকে ২০ হাত দুরে স্কুলের ভবন, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ঠিক মতো স্কুলে পাঠাচ্ছে না।

এদিকে ভাঙন কবলিত এলাকার অধিকাংশ মানুষের অভিযোগ করে বলেন, পাউবোর নিযুক্ত ঠিকাদার কোম্পানি নিলয় ট্রেডাস ঠিক-ঠাক বালুর বস্তা ফেলছে না, মাঝে মাঝে কাজ করে আবার থেমে যায়। ঠিকাদারা সঠিক কাজ করলে হয়তো কিছু সম্পদ রক্ষা করা যেতো।

ভাঙন কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো কথা জানিয়ে উপজেলার সহকারি কমিশনার ভূমি আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রাথমিক ভাবে ভাঙন রোধে পাউবোর মাধ্যমে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, এরই মধ্যে ২২৬টি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের মাঝে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে, আরো সহায়তা দেওয়ার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’

আলফাডাঙ্গার বিশ গ্রামে মানুষের অসহায়াত্বের কথা উল্লেখ করে উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহিদ হাসান বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় মধুমতির পানি বৃদ্ধির ফলে এ উপজেলা তিনটি ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হয়েছে। পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশতলা সড়কের অধিকাংশ এবং টগরবন্দ এলাকার দুইটি পাকা সড়কের অংশিক নদীর গর্ভে চলে গেছে। এখন ভাঙন কবলিত মানুষগুলো অসহায়ের মতো বসতবাড়ী সরিয়ে নিচ্ছে।’ এই ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষে দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

এ বিষয়ে পাউবো’র জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমাদ বলেন, নদীতে প্রচুর ¯্রােত, এর মধ্যে জরুরি কাজ করা কঠিন। ¯্রােত না কমলে কাজ করা যাবে না। তিনি বলেন, মধুমতির ভাঙন রোধে স্থায়ী বাধ করতে ব্যায় হবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রয়োজন মতো অর্থ বরাদ্দ আমরা পাচ্ছি না। এটাই সমস্যা।

জানতে চাইলে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘জেলার পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়াল খা ভাঙন শুরু হয়েছে, এই ভাঙন রোধে প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু হয়েছে, তবে আগামী শুকনো মৌসুমে স্থায়ী ভাবে যাতে কাজ করা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা চলছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close