এইচ আর তুহিন, যশোর

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

যশোরের অভয়নগরে আশ্রয়ণ প্রকল্প

জানেন না চেয়ারম্যানরা অনিয়মের অভিযোগ

‘শেখ হাসিনা আমারে ঘর দিয়েছেন। সব খরচ তার। কিন্তু ঘরে বালি ও মাটি ভরাট, মিস্ত্রীদের খাওয়ার খরচ এবং বকশিস বাবদ আমার খরচ হয়েছে মোট ৩ হাজার টাকা। এখন ঘরে দেওয়া কাঠ ভালো না। মেঝেতে ইট বসিয়ে সিমেন্ট বালি দিয়ে ডলে দিয়েছে। ঘরে দুটি জানালা দিয়েছে, কিন্তু কোনো রড নেই।’ বলছিলেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের বিধবা রিজিয়া বেগম। একই ধরনের অভিযোগ করেন পায়রা ইউনিয়নের কাদিরপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র মোমেনা বেগম ও ফজিলাতুন্নেছা বেগম। তারা প্রত্যেকে সরকারের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় একটি করে ঘর পেয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পরিচালিত আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ‘যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ উপ-খাতের আওতায় উপকারভোগীদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ঘরটি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ১ লাখ টাকা। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলায় আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে। উপজেলায় মোট ১৮৬ জন উপকারভোগীকে এ ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ঘরের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি ঘরের জন্য ১ লাখ টাকা ধরে উপজেলায় মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

কয়েকজন উপকারভোগী অভিযোগ করেন, ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রি ব্যবহার করা হচ্ছে। ঘরের মেঝে এবং বারান্দা মাটি ও বালি দিয়ে ভরাট করার কথা। কিন্তু উপকারভোগীদের দিয়ে মাটি ও বালি ভরাট করা হচ্ছে। কোনো কোনো ঘরে খোয়া ছাড়াই মেঝে করা হয়েছে। মেঝেতে ৩ ইঞ্চি ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ১ ইঞ্চি বা তার চেয়েও কম। মেঝেতে ঢালাইয়ের নিচে পলিথিন এবং খোয়া দেওয়া হচ্ছে উপকারভোগীর কাছ থেকে নিয়ে। চারটি জানালার বদলে দেওয়া হচ্ছে দুটি-তিনটি করে জানালা। দরজায় রং করার নিয়ম থাকলেও তা করা হচ্ছে না। ঘরের বেড়া, ঘর ও চালে কাঠ ব্যবহারের তালিকায় রয়েছে শাল, গর্জন, জামরুল, কড়াই, মিল কড়াই, শিশু, তাল, পিতরাজ, দেবদারু ও আকাশমনি। কিন্তু দেওয়া হচ্ছে সারি-অসারি মেহগনি কাঠ। টয়লেটে আটটি রিং-স্ল্যাব দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ছয়-সাতটি করে। ঘর নির্মাণ শ্রমিকদের চার-পাঁচ দিন দুই বেলা করে খেতে দিতে হচ্ছে। নির্মাণকাজের শ্রমিক হিসেবে উপকারভোগী পরিবারকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, কাজ বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমিটির আহ্বায়ক, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সদস্য সচিব এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কমিটির সদস্য। ইউএনও’র তত্ত্বাবধানে পিআইসি দ্বারা উপজেলা প্রশাসন সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) ঘর নির্মাণ কাজ সম্পাদন করবে। নির্মাণ কাজের সাথে অবশ্যই শ্রমিক হিসেবে উপকারভোগী পরিবারকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করেন, কোনো সভা বা আলোচনা ছাড়াই ইউএনও মো. শাহীনুজ্জামান নিজেই শ্রমিক দিয়ে ঘর নির্মাণের কাজ করাচ্ছেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিজিবুল ইসলাম।

জানতে চাইলে বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ গোলাম হোসেন বলেন, ঘর নির্মাণের বিষয়ে ইউএনও আমাকে কিছুই জানাননি। সব কাজ উনি করছেন। মাঝে একদিন উনি আমাকে ডেকে বললেন, ঘরের তালিকায় আপনার স্বাক্ষর লাগবে। সেইভাবে আমি স্বাক্ষর করেছি। এরচেয়ে বেশি আমি আর কিছুই জানি না।

প্রেমবাগ ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন। তিনি বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের ব্যাপারে ইউএনও সাহেব কোনোদিন কোনো সভা করেননি। কমিটিতে আছি সেটাই জানতাম না। পরে শুনেছি। কয়েকদিন আগে একটি কাজে ইউএনও অফিসে তিনি বললেন, প্রেমবাগ ইউনিয়নে ২১ জনের তালিকা হয়েছে। তালিকায় স্বাক্ষর করেন। একই অভিযোগ করেন শ্রীধরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী।

জানতে চাইলে অভয়নগর ইউএনও মো. শাহীনুজ্জামান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ যথাযথভাবে করা হচ্ছে। নির্মাণসামগ্রির মানও ভালো। কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব রয়েছেন। তারা যে অভিযোগ করছেন তা সঠিক নয়। তারা কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন।

উপকারভোগীদের টাকা ও নির্মাণ সমগ্রী নেওয়া প্রসঙ্গ তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছু বলেননি। আপনারা উনাদেরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন। আমি বিষয়টা দেখবো।

জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, অভয়নগর আশ্রয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে এডিসি শফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দেখবেন। প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close