এস এম শাফায়েত, চুয়াডাঙ্গা

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গা শহরে জলাবদ্ধতা

নেই পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা কমেছে নিষ্কাশনের জলাশয়

দেশের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে চলছে ভারী বৃষ্টিপাত। একই অবস্থা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গা শহরসহ আশপাশ এলাকার। এতে শহরের নানাস্থানে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বাসাবাড়ির সামনে জমে রয়েছে পানি। শহরের প্রধান প্রধান সড়কসহ পাড়া-মহল্লার অলিগলিগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডুবে থাকে পানির নিচে। চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পৌরবাসী।

পৌরবাসীর অভিযোগ, শহরে জনসংখ্যা ও বসবাসের ঘনত্বের তুলনায় পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের বড় বাজার, মুক্তিপাড়া, মাঝেরপাড়া, একাডেমি মোড়, রেলপাড়া, রেলবাজার, ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডপাড়া, পুরাতন স্টেডিয়াম, ফার্মপাড়া, শান্তিপাড়া, বনানিপাড়া, রেলস্টেশন, মাছপট্টি, জান্নাতুল মওলা কবরস্থান, টিএন্ডটি মোড়, সরকারি কলেজ, কাঠপট্টি, সিনেমাহলপাড়াসহ পৌরসভার প্রায় সব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া শহরের চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়ক, চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়ক, কোর্টমোড়-রেলস্টেশন সড়ক, কবরী রোড, একাডেমি মোড়-আলমডাঙ্গা সড়ক, ফেরিঘাট রোডসহ পৌর শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে আটকে আছে বৃষ্টির পানি। শহরের রাস্তাগুলো জলমগ্ন থাকায় নষ্ট হচ্ছে পিচ ঢালাই। সৃষ্টি হচ্ছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। এতে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যানবাহন চালক ও পথচারীদের।

ভুক্তভোগী পৌরবাসীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে ওলিগলিতে। কাদা-পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। সেই সঙ্গে জমে থাকা পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা-মাছিসহ নানা ধরণের জীবাণু। যা স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছেন, এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পানি জমে থাকা রাস্তাগুলো চলাচল অনুনপযোগী হয়ে পড়বে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে মাথাভাঙ্গা, নবগঙ্গা নদী। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শহরের পাশের ছোট-বড় জলাশয়গুলো ভরাট করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া মাথাভাঙ্গা ও নবগঙ্গা নদীতে পলি জমে গভীরতা কমে গেছে। শহরের প্রবীণ নাগরিকরা বলেন, বৃষ্টির পানি ধারণের আধার পুকুর, নদী, জলাশয় দখল ভরাট হয়ে গেছে। এতে কয়েক বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা শহরের অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে।

ড্রেনের অবস্থা জানতে যোগাযোগ করা হয় পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান কাওছারের সঙ্গে। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শহরের পুলিশ পার্ক লেন, কেদারগঞ্জ নতুন বাজার, হাটকালুগঞ্জ, বড় বাজার ও ইসলামপাড়া এলাকার ড্রেন দিয়ে মাথাভাঙ্গা নদীতে পানি ফেলা হয়। যা পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়াও পুরাতন ড্রেনগুলো পলি-মাটিতে ভরাট হয়ে রয়েছে। পুরাতনের সঙ্গে নতুন ড্রেনগুলোরও প্রায় একই অবস্থা।’ তিনি বলেন, ‘ড্রেনগুলো শুধু পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হলেও অবৈধভাবে ড্রেন কেটে পাইপ দিয়ে পয়নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহার করছেন নাগরিকরা। সেই সঙ্গে ড্রেনের মধ্যে ফেলা হচ্ছে ময়লা ও আবর্জনা। যা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্যও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নকর্মী নেই।’

জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়ে ড্রেনগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পাশাপাশি জনসাধারণকে নীতিমালা অনুযায়ী বাসা-বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। পূর্বের ড্রেনগুলো পরিকল্পিত ও টেকসই না হওয়ায় সবগুলো অকেজো হয়ে রয়েছে।’ নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘বেশকিছু প্রকল্পের অধীনে ইতমধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ধারে এবং পাড়া মহল্লায় আরসিসি হাইড্রেন, ব্রিক ড্রেন, কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। আরো কিছুর কাজ চলছে। তবে জনসংখ্যা ও বসতি বাড়ার কারণে আরও ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ করা প্রয়োজন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close