দিনাজপুর ও বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি

  ১৭ আগস্ট, ২০১৯

অবিক্রীত গরু নিয়ে বিপাকে খামারি ও ব্যবসায়ীরা

দিনাজপুর ও পাবনার বেড়া-সাঁথিয়া অঞ্চল

কোরবানির ঈদে পশুর হাটগুলোতে দিনাজপুর জেলার গরুর খামারি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের লোকসান গুনেছেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় অনেকেই লসে গরু বিক্রি করেছেন। পথে বসার উপক্রম প্রায় আড়াই হাজার খামারি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীর।

এদিকে পাবনা বেড়া-সাঁথিয়া উপজেলার গো-খামারী ও মওসুমি ব্যবসায়ীদের এবারের কোরবানির ঈদে প্রায় তিন কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ক্রস হাইব্রিড ও দেশি জাতের অবিক্রিত প্রায় ১২ হাজার গরু নিয়ে গো-খামারি ও মওসুমি ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এ অঞ্চলের প্রায় দুই সহ¯্রাধিক মওসুমি গরু ব্যবসায়ী ও খামারি মূলধন হারিয়ে পথে বসেছেন। তবে মওসুমি গরু ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী খামারী ও চাষিদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করতে পেরে চরম বিপাকে পড়েছেন।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, সারাদেশে দিনাজপুর অঞ্চলের গরুর খ্যাতি ও চাহিদা থাকায় জেলার সদর উপজেলা বাদে বাকি ১২ উপজেলার খামারি ও চাষীরা ক্রস জাতের পাবনা ব্রিড, অস্ট্রেলিয়ান-ফ্রিজিয়ান ব্রিড, ইন্ডিয়ান হরিয়ান ব্রিড, পাকিস্তানি সাহিয়াল ব্রিড ও দেশি জাতের গরু পালন করেন। জেলার খামারি ও চাষীরা জেলার চাহিদা মিটিয়ে ৮০ হাজারের বেশি পশু দেশের বিভিন্ন হাটে সরবরাহ করেছিলেন। কিন্তু এবার দেশের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে সরবরাহ বেশি থাকায় গরুর দরপতন ঘটে। ব্যবসায়ীরা খামারি-চাষীদের বাড়ি থেকে নগদ-বাকিতে গরু কিনে সড়ক ও নৌপথে ঢাকা, সিলেট, চিটাগাংসহ বিভিন্ন জেলার পশুরহাটে গরু নিয়ে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে কেউ লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করেছেন, আবার অনেকেই বিক্রি করতে না পেরে ফেরত এনেছেন।

চিরিরবন্দর উপজেলার গরু ব্যবসায়ী আলী বলেন, দেশের অধিকাংশ জেলায় এখন ছোট-বড় অনেক গরুর খামার গড়ে উঠেছে। ঈদের দুই দিন আগে হঠাৎ গরুর দাম কমে যাওয়ায় ১ লাখ টাকা দামের গরু ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।

রাণীপুকুর গ্রামের রহমত ব্যাপারী, ঢাকার গাবতলী পশুর হাটে নেওয়া ২৯৩টি গরুর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ১২৫টি। অবিক্রিতগুলো ফেরত এনেছেন। তাদের লোকসান প্রায় ৩৬ লাখ টাকা। একই অবস্থা বিরল হালজা গ্রামের ব্যবসায়ি ভবেশের। তার নেওয়া ৫৫টি গরুর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৩৬টি।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দিনাজপুর জেলার আড়াই সহস্রাধিক গরু ব্যবসায়ী ও খামারি প্রত্যেকে গড়ে ৫০ হাজার থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসান দিয়েছেন।

দিনাজপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিনুর আলম, অতিরিক্ত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আশিকা আকবর তৃষা ও ডা. পারভীন সুলতানা যৌথ বিবৃবিতে এ প্রতিনিধিকে জানান, দিনাজপুরে ব্যাপকভাবে প্রাণী সম্পদ রয়েছে। ১৩ থানায় ব্যাপক হারে এখানে পশু পালন করে দিনাজপুরের মানুষ। রয়েছে বড় বড় গো-খামারীও। এবার দেশী গরুর সরবরাহ ভাল থাকায় অনেক খামারী ও ব্যবসায়ীরা আগের তুলনায় দাম পায়নি। তবে আমাদের কাছে মনে হয়েছে দাম ঠিকই আছে। গুটি কয়েক ব্যবসায়ী লোকসানে পড়লেও বেশির ভাগ খামারী ও ব্যবসায়ীরা কোরবানি ঈদে গরুর ভাল দাম পেয়েছে।

এদিকে পাবনার বেড়া উপজেলা প্রতিনিধি জানান, বেড়া-সাঁথিয়া উপজেলার খামারি ও চাষিরা জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার কোরবানির পশু দেশের বিভিন্ন হাটে সরবরাহ করেছিলেন।

বেড়ার প্রতিষ্ঠিত গরু ব্যবসায়ী আলতাব হোসেন জানান, দেশের টাংগাইল, ঢাকা, কুমিল্লা, চিটাগাং, সিলেটসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় ছোট-বড় অনেক গরুর খামার গড়ে উঠেছে। ঈদের দুই দিন আগে হঠাৎ গরুর দাম কমে যাওয়ায় এক লাখ টাকা দামের গরু ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। প্রত্যেক ব্যবসায়ীরই কম বেশি লোকসান হয়েছে।

এদিকে ঢাকার গাবতলী পশুরহাটে গরু তুলেও অবিক্রিত অবস্থায় ফেরত এনেছেন অনেক ব্যবসায়ি। বেড়ার নতুনপাড়া গ্রামের হায়দার আলী ৬০টি গরুর মধ্যে ৪০টি গরু হ্রাস মূল্যে বিক্রি করেছেন। এতে লোকসান হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। একইভাবে নদী পাড়ের সোলেমান ব্যাপারির ২৫০টি গরুর মধ্যে ১১০টি বিক্রি হয়েছে। তার লোকসান হয়েছে প্রায় ২৫ থেকে ২৭ লাখ টাকা।

সাঁথিয়া উপজেলার সেলন্দা গ্রামের খামারি রজব আলী হাইব্রিড জাতের ২০টি গরু চট্টগ্রামের হালিশহর হাটে তুলে ফেরত এনেছেন ১২টি। তার লোকসান হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা।

এদিকে বাকি টাকা না পাওয়ার আশঙ্কায় এখন অনেক খামারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গরু ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ খামারি ও চাষীদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে নিজেদের আড়ালে রাখছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close